রয়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী, বন্ধ হয়ে আছে পঠনপাঠন, কবে থেকে স্কুল যাব? প্রশ্ন পড়ুয়াদের...
আজকাল | ০৪ জুন ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: এলাকার আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি গত এক মাসে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে গেলেও মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের একাধিক সরকারি স্কুলে গরমের ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও স্বাভাবিক পঠন-পাঠন শুরু করা যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
সামশেরগঞ্জে এখনও কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়ে গিয়েছে। তাদেরকে রাখা হয়েছে বিভিন্ন স্কুলে। যে কারণে ধুলিয়ান পুরসভা এলাকা এবং সাহেবনগরে কয়েকটি স্কুলে স্বাভাবিক পঠন-পাঠন ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে ব্লক প্রশাসনের শীর্ষস্তর থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে আগামী দু একদিনের মধ্যেই সরকারি স্কুলগুলি থেকে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্যের বাহিনী সরিয়ে নেওয়া হবে এবং সমস্ত স্কুলে স্বাভাবিক পঠন-পাঠন শুরু করা যাবে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সামশেরগঞ্জে সাম্প্রতিক অশান্তির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এই মুহূর্তে সেখানে ৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে রাজ্য পুলিশের বিভিন্ন স্তরের প্রায় ২০০ জন আধিকারিক রয়েছেন। আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনীর থাকার কথা।
এই বিপুল সংখ্যক বাহিনী রাখার জন্য প্রশাসনের তরফে ধুলিয়ান পুরসভা এবং আশেপাশের সমস্ত সরকারি স্কুল অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সোমবার থেকে রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলোতে গরমের ছুটি শেষে নতুন করে পঠন-পাঠন শুরু হলেও সামশেরগঞ্জে কয়েকটি স্কুলে তা শুরু করা যায়নি।
মঙ্গলবার সামশেরগঞ্জের বিডিও সুজিত কুমার লোধ বলেন, 'এই মুহূর্তে সামশেরগঞ্জে বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় ৮০০ জন রয়েছেন। আমরা আশা করছি দু-একটি স্কুল থেকে আগামীকালের মধ্যেই সমস্ত ফোর্সকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। বাকি কয়েকটি জায়গায় আগামী সপ্তাহের মধ্যেই পঠন-পাঠনের জন্য পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে যাবে। '
বিডিও জানান,' বিপুলসংখ্যক জওয়ান থাকায় তাঁদের জন্য নতুন করে শৌচাগার তৈরি করতে কিছুটা সময় লাগছে।' মঙ্গলবার সামশেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সুব্রত ঘোষসহ থানার অন্য আধিকারিকরা ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে বাহিনীর থাকার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত স্থির হয়েছে ৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ধুলিয়ান পুরসভা এলাকার বিভিন্ন স্কুল থেকে সরিয়ে নিয়ে সামশেরগঞ্জের কর্মতীর্থ, কিছু 'গেস্ট হাউস' এবং কোভিড সেফ হাউসে রাখা হবে। ইতিমধ্যেই সেই ভবনগুলো পরিষ্কার করার কাজ শুরু হয়েছে।
তবে গরমের ছুটি শেষ হওয়ার পর সোমবারের মতো মঙ্গলবারেও যে স্কুলে ক্লাস করা যায়নি তা মেনে নিয়েছেন ধুলিয়ান বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জয়শ্রী দত্ত।তিনি বলেন,' আমার স্কুলে প্রায় ৫৪০০ ছাত্রী পড়াশোনা করে। যেহেতু স্কুলের মধ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা রয়েছেন তাই আজও ছাত্রীদেরকে স্কুলে ডাকা হয়নি। শ্রেণীকক্ষগুলি এবং বিদ্যালয়ের শৌচাগার ব্যবহার করার মতো জায়গা নেই। আমরা স্কুলে এসে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে ভর্তির কাজ চালাচ্ছি।'
একই কথা জানিয়েছেন ধুলিয়ান কাঞ্চনতলা জেডিজে ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই মাসুদ রহমান। তিনি বলেন,' রাজ্য পুলিশের বাহিনী আমার স্কুলে রয়েছে। তার ফলে গতকালের মত আজও চারটি পিরিয়ড শেষে ছাত্র-ছাত্রীদের ছুটি দিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। কারণ ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলের শৌচাগার ব্যবহার করতে পারছে না।'
সূত্রের খবর, এই দুটি স্কুল ছাড়াও কৃষ্ণকুমার-সন্তোষকুমার স্মৃতি বিদ্যাপীঠ, বানিচাঁদ বালিকা বিদ্যালয়সহ আরও একাধিক স্কুলে স্বাভাবিক পঠনপাঠনের পরিস্থিতি নেই। একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শ্রেণীকক্ষ বাদ দিয়েও শিক্ষকদের বসার ঘর এবং তাঁদের শৌচাগারও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা দখল করে রেখেছেন।