সিপিএম নেতার কল্যাণে রেশন কার্ড! দুই দশক পর বর্ধমানে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী
প্রতিদিন | ০৪ জুন ২০২৫
সৌরভ মাজি, বর্ধমান: দুই দশকের বেশি সময় ধরে বর্ধমানে থাকছিলেন। সিপিএম নেতার দৌলতে তৈরি হয়েছিল রেশন কার্ড! ধীরে ধীরে অন্যান্য কাগজপত্রও তৈরি হয়ে যায়। জানা গেল, সেই ব্যক্তি আদপে বাংলাদেশের বাসিন্দা। অবৈধভাবেই সীমান্ত পেরিয়ে ২০০১ সালে ভারতে এসেছিলেন। অবশেষে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ওই অনুপ্রবেশকারী। ধৃতের নাম মহম্মদ সফিকুল সর্দার। মঙ্গলবার ধৃতকে বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। সিপিএম নেতার মাধ্যমে ওই ব্যক্তি পরিচয়পত্র পেয়েছেন। একথা জানতে পেরেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চর্চা।
বর্ধমান পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার বর্ধমান শহরের তেলিপুকুর এলাকায় কয়েকজন বাংলাদেশি সন্দেহে সফিকুলকে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে ট্রাফিক পুলিশ গিয়ে তাঁকে আটক করেন। পরে বর্ধমান থানার পুলিশের হাতে সফিকুলকে তুলে দেওয়া হয়। সফিকুলের বিরুদ্ধে দেওয়ানদিঘি থানার কলিগ্রামে বাসিন্দা সজল মল্লিক লিখিত অভিযোগ করেন। তার ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। জেরায় ধৃত জানিয়েছেন, তাঁর বাড়ি যশোহর জেলার সহরসা থানার চালতেবেড়িয়ার রুদ্রপুরে। ২০০১ সালে বসিরহাট সীমান্ত দিয়ে কোনও বৈধ পাসপোর্ট ছাড়াই ভারতে অবৈধভাবে চলে এসেছিলেন। আজ, মঙ্গলবার ধৃতকে আদালতে তোলা হয়।
এদিন আদালতে নিয়ে যাওয়ার পথে ধৃত সংবাদমাধ্যমের কাছে স্বীকারও করেছেন, তিনি বাংলাদেশি। সফিকুল বলেন, “২০০১ সালে ১০-১১ বছর বয়সে ভারতে চলে আসি। আমার কোনও পাসপোর্ট নেই। তারপর কখনও দোকানে কাজ করেছি। বর্তমানে লরি চালাতাম।” ভারতে আসার পর শক্তিগড় এলাকায় থাকতেন। তিনি বলেন, “ওই এলাকার এক সিপিএম নেতা রেশন কার্ড করিয়ে দিয়েছিলেন। এখন মারা গিয়েছেন ওই সিপিএম নেতা। তারপর প্যানকার্ড করিয়েছি, ড্রাইভিং লাইসেন্স করিয়েছি।” কিন্তু কোন সিপিএম নেতা তাঁকে রেশন কার্ড করিয়ে দিয়েছিলেন? সেই নেতার নাম বলতে চাননি সফিকুল। ওই সিপিএম নেতা মারা গিয়েছেন। সেই কথা শুধু জানিয়েছেন ধৃত।
ধৃতের এক দিদিও শক্তিগড়ে থাকেন। সেই বাড়িতেই থাকতেন সফিকুল। দিদির খোঁজ করছে পুলিশ। প্রশ্ন উঠেছে বাম আমলে এমন কত বাংলাদেশি নাগরিক রেশন কার্ড পেয়েছেন? কত লোক এভাবে ভোটার হয়েছেন? ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই যুবক কতটা সত্য বলেছেন, সেটা যাচাইয়ের বিষয়। এই বিষয়ে বলার কিছু নেই।” তৃণমূলের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “বাংলাদেশিদের আমন্ত্রণ করে ডেকে এনেছিল সিপিএম। তাদেরই ভোটব্যাঙ্ক ছিল বাংলাদেশিরা। এই যুবক নিজে স্বীকার করেছে সিপিএম নেতা রেশন কার্ড করে দিয়েছিল বলে। এরকম খুঁজলে আরও অনেক পাওয়া যাবে, যারা সিপিএমের সময় অবৈধভাবে এদেশে এসেছেন। বাংলার পুলিশ অনুপ্রবেশকারী ওই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে।”