ধীমান রায়, কাটোয়া: ঋণে জড়িয়ে পড়েছিলেন। বাড়িতে ‘হানা’ দিচ্ছিলেন পাওনাদাররা। সোমবার রাতে মেয়ের সামনে অপমান করেন এক পাওনাদার। সেই অপমান সহ্য করতে পারেননি তিনি। মঙ্গলবার সকালে সবার আগে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির থেকে কিছুটা দূরে কালীমন্দিরে পুজো দেন। তারপর সেখানেই ‘আত্মঘাতী’ অশিক্ষক কর্মী। মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামে।
মৃত ব্যক্তির নাম পার্থসারথি বারিক। বয়স ৪৪ বছর। আউশগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে ল্যাবরেটরি অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে চাকরিরত ছিলেন। স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে মোটামুটি স্বচ্ছলভাবেই চলে যেত সংসার। কাল হল সাতলাখি চারচাকা গাড়ি কিনে! গাড়ির কিস্তি মেটাতে দেনায় ডুবে গিয়েছিলেন তিনি।
অভিযোগ, সোমবার সকালে গ্রামেরই এক পাওনাদার পার্থসারথিবাবুকে তাঁর মেয়ের মেয়ের সামনেই টাকা চেয়ে চড় থাপ্পড় মারে। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে অনুমান। মঙ্গলবার সকালে আউশগ্রাম থানার অদূরে কালীমন্দির থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। মৃতের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি সুইসাইড নোট। তাতে পাওনাদার হিসাবে তিনজনের নাম উল্লেখ রয়েছেন। তিনজনের মধ্যে রয়েছেন আউশগ্রাম স্কুলেরই এক শিক্ষক। তবে তিনি ওই গ্রামেরই বাসিন্দা স্বপন সেন নামে জনৈক ব্যবসায়ীর কাছে সোমবার অপমানিত হওয়ার পরেই এই সিদ্ধান্ত নেন বলে পরিবারের অভিযোগ। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
মৃতের স্ত্রী অপরূপা বারিক জানিয়েছেন সোমবার তাঁর স্বামীর জ্বর এসেছিল। রাতে খাওয়া দাওয়ার পর সবাই একসঙ্গে শুয়ে পড়েন। অন্যান্যরা ওঠার আগেই ভোরে বাড়িতে স্নান সেরে মন্দিরে চলে গিয়েছিলেন পার্থসারথিবাবু। বাড়ির কেউ জানতে পাননি। অপরূপাদেবী বলেন, “টাকার জন্য বছর দুয়েক আগে গ্রামেরই ব্যবসায়ী স্বপন সেনের কাছে গাড়িটি বন্ধক দেওয়া হয়েছিল। ছয় মাস পর থেকেই স্বপনবাবু তাগাদা দিতে শুরু করেন। সোমবার বাড়িতে এসে সবার সমনে আমার স্বামীকে চরম অপমান করেন। গায়ে হাত পর্যন্ত তোলেন। ভীষণ অপমানিত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এই ঘটনা ঘটতে পারে বুঝতে পারিনি।”
আউশগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফকির মণ্ডল বলেন, “ভীষণ দায়িত্বশীল এবং সৎ মানসিকতার ছিলেন পার্থসারথি। আত্মসম্মান বোধ ছিল খুব বেশি। বছর চারেক আগে শখ করে একটি চারচাকা গাড়ি কিনেছিলেন। তারপর থেকেই আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়ে যান। লোকমুখে শুনেছি বাইরে একাধিক ব্যক্তির কাছে বেশকিছু টাকা দেনা করেন। কিন্তু তাঁর এই সমস্যার কথা আমাদের সঙ্গে কোনওদিনও বলেননি। এমন করবেন তা বুঝতে পারিনি।” পুলিশ দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বর্ধমানে পাঠিয়েছে। এদিন দুপুর পর্যন্ত নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের হয়নি।