নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি ও সংবাদদাতা, বাগডোগরা: চারটি টিম। সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনী। আর্থিক অপরাধের মামলায় মঙ্গলবার একযোগে শিলিগুড়ির চার জায়গায় ‘ম্যারাথন’ অভিযান চালায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এজন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে চারটি বাড়ি ঘিরে রাখা হয়। অভিযোগ, ‘মিউল অ্যাকাউন্ট’-এর মাধ্যমে ‘মানি ট্রেল’ করেছে অভিযুক্তরা। এজন্য অভিযুক্তদের কেউ ব্যাঙ্ককর্মী পরিচয় দিয়ে, কেউ সাইবার কাফের আড়ালে, আবার কেউ কেউ ব্যবসায়ীর বেশে এমন অপরাধ চালিয়েছে। মহকুমায় এ নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
আর্থিক অপরাধে অভিযুক্তদের মধ্যে একজনের বাড়ি শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মহারাজ কলোনি। ইটের দেওয়াল, টিনের চাল দেওয়া একাধিক রুম রয়েছে বাড়িতে। ভোর ৫টা নাগাদ বাড়িটি ঘিরে ফেলে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এরপর সেখানে ইডি’র অফিসাররা তল্লাশি অভিযান শুরু করেন। দিনভর অপারেশন চলে। স্থানীয়দের একাংশ বলেন, ওই যুবক কী কাজ করত, তা স্পষ্ট নয়। সম্ভবত কোনও অর্থনৈতিক সংস্থার এজেন্ট হিসেবে কাজ করত। ইদানিং তার ঠাটবাটও পাল্টে গিয়েছিল। খবর পেয়ে স্থানীয় কাউন্সিলার বিজেপির বিবেক সিং ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি বলেন, কমিশনের টোপ দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিয়ে ছেলেটি অবৈধ লেনদেন করত বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে শুনেছি। সেই অ্যাকাউন্টগুলিকে ‘মিউল’ বলে। এজন্যই অভিযুক্তের বাড়িতে কেন্দ্রীয় বাহিনী অভিযান চালিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট এলাকার পাশে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নতুনপাড়ায় আরও দুই অভিযুক্তের বাড়ি। একযোগে সেই দু’টি বাড়িতে হানা দেয় ইডির দু’টি টিম। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তদের মধ্যে একজনের সাইবার কাফে রয়েছে। আরএকজন জমি ও বাড়ির কারবারি। এলাকায় তার দু’টি বাড়ি রয়েছে। অভিযোগ, অনলাই প্রতারণার টাকা মিউল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তারা একজায়গা থেকে আরএক জায়গায় স্থানান্তরিত করেছে। স্থানীয় কাউন্সিলার বিজেপির অনিতা মাহাত বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেব।
একই সময় মাটিগাড়া কলাবাগানে আরএক যুবকের বাড়িতে হানা দেয় ইডি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ব্যাঙ্ককর্মী পরিচয় দিয়ে গ্রামে বসবাস করত। মাস খানেক আগে তার বিয়েতে এলাহি আয়োজন করা হয়। এখন বোঝা যাচ্ছে সে আসলে ব্যাঙ্ককর্মী নয়। গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, ব্যাঙ্ককর্মী পরিচয় দিয়ে কমিশনের ভিত্তিতে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিয়ে প্রতারণা চক্র চালাত সে। এমনকী সে চাকরি দেওয়ার নাম করেও অনেকের কাছ থেকে টাকা তুলেছে বলে অভিযোগ।
অভিযান নিয়ে ইডি’র অফিসাররা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তরা সম্ভবত একটি র্যাকেটের। অনলাইন প্রতারণা সহ অবৈধভাবে উপার্জন করা টাকা ছোট ছোট অঙ্কে বিভক্ত করে মিউল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে হাতিয়েছে বলেই অনুমান। অভিযুক্তদের হেফাজত থেকে উদ্ধার হতে পারে বেহিসেবি অর্থ। এজন্য অভিযানে ব্যাঙ্ককর্মীকে সঙ্গে নিয়েছে ইডি।