গলার নলি কাটার পর ছটফটানি দেখতেই বাবাকে ঘুম থেকে তুলে ছুরি চালায় হুমায়ুন
বর্তমান | ০৪ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: ঘুমন্ত অবস্থায় গলায় ছুরি চালালে বাবা যন্ত্রণায় ছটফট করত না। তাতে মৃত্যু হলেও ঠিকমতো শাস্তি হতো না। ছটফটানি দেখার জন্যই বাবাকে ঘুম থেকে তুলে গলার নলি কাটে হুমায়ুন কবীর। পুলিসের জেরায় এমনটাই জানিয়েছে বাবা এবং মা’কে হত্যাকারী মেমারির হুমায়ুন। সে জানিয়েছে, মা মমতা পারভিন বাবাকে খুনের সময় বাধা দিয়েছিল। সেই সময় তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেলে দিই। মায়ের মাথা দেওয়ালে ধাক্কা খায়। বাবার মৃত্যু নিশ্চিত করার পর মায়ের গলার নলিও ছুরি দিয়ে কাটা হয়। এক পুলিস আধিকারিক বলেন, এখন ধৃতকে সামনে বসিয়ে জেরা করা দায় হয়ে উঠেছে। সে আচমকাই মারমুখী হয়ে উঠছে। সামনে যা থাকছে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিচ্ছে। তার মনের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে, সেটা তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
হুমায়ুন অনেক আগেই তার মা এবং বাবাকে খুনের পরিকল্পনা করেছিল। তার মানসিক অবস্থা দেখে সেটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। খুনের কথা স্বীকার করে নেওয়ায় পুলিস ওই ঘটনায় তথ্য সংগ্রহের উপর জোর দিয়েছে। ফরেসিক বিশেষজ্ঞরা আগেই বেশকিছু তথ্য পুলিসকে দিয়েছে। তবে হুমায়ুন প্রমাণ লোপাটের জন্য মরিয়া চেষ্টা করেছিল। বাড়িতে থাকা সিসি ক্যামেরা গুলি উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ওই ক্যামেরাগুলি সে নিজে বাড়ির নিরাপত্তার জন্যই লাগিয়েছিল। ছুরিটিও সে সঙ্গে করে নিয়ে চলে যায়। বাড়ির পিছনের দিকের দরজা দিয়ে সে বেরিয়ে যায়। মূল রাস্তা ধরে গেলে পালিয়ে যাওয়ার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পুলিস সহজেই পেয়ে যেত। কিন্তু, উল্টো দিকের রাস্তা ধরায় এই ফুটেজ পেতে তদন্তকারীদের ঝক্কি পোহাতে হয়।
খুনের পর বনগাঁ হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার ছক ছিল হুমায়ূনের। কিন্তু, বনগাঁয় নিজের ভুলের কারণেই সে জালে জড়িয়ে যায়। জেরায় সে জানিয়েছে, বনগাঁতে তাকে এভাবে জনতা ধরে ফেলবে বলে সে ভাবতে পারেনি। সেখানে গিয়ে অশান্তি করার কোনও পরিকল্পনাও তার ছিল না। কিন্তু, আচমকায় সে বিবাদে জড়িয়ে যায়। হাতে ছুরি থাকায় কেউই তাকে ধরতে পারবে না বলে তার ধারণা ছিল। কিন্তু কয়েকজন একসঙ্গে জাপটে ধরতেই সে আর পালিয়ে যেতে পারেনি।
আরেক আধিকারিক বলেন, এত কিছুর পরও হুমায়ুন নিজের মেজাজেই রয়েছে। এই ধরণের ঘটনার পুননির্মাণ করতে হয়। কিন্তু, তাকে সেখানে নিয়ে গিয়ে পুননির্মাণ করা সহজ হবে না। নিজের খেয়াল না হলে সে কোনও কিছুই করতে চাইবে না। এই অবস্থায় তাকে বোঝানোর জন্য মনোবিদের সাহায্য নেওয়া হতে পারে। তারপর বাকি আইনি প্রক্রিয়া করা হবে। কয়েক দিনের মধ্যেই তাকে মেমারিতে আনা হবে। ইতিমধ্যে বর্ধমান পুলিসের একটি দল একাধিকবার বনগাঁয় গিয়ে তাকে জেরা করেছে।