• কাজ থেকে ফেরার পথে নেশার আসরে গোলমাল, মল্লারপুরে হাতুড়ি দিয়ে মেরে প্রৌঢ়কে খুন
    বর্তমান | ০৪ জুন ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট : বাড়ি থেকে কাজে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে নেশার আসরে নিয়ে গিয়ে এক প্রৌঢ়কে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল সহকর্মীদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে মল্লারপুরে। পুলিস অভিযুক্ত তিনজনকে আটক করে তদন্তে নেমেছে।   

    পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত প্রৌঢ়ের নাম স্বপন বাগদি (৫০)। বাড়ি ময়ূরেশ্বর থানার কুণ্ডলা গ্রামে। তিনি পেশায় ডেকরেটার্সের কর্মী। অনেকদিন আগেই তাঁর স্ত্রী মারা যান। বিবাহিত এক মেয়েকে নিয়ে তিনি থাকতেন। সোমবার সকালে লাগোয়া ইঁদুরিপাড়া গ্রামের তিনজনের সঙ্গে মল্লারপুরে কাজে গিয়েছিলেন তিনি। ওই তিনজনও ডেকরেটার্সের কর্মী। বিকেলে ফেরার পথে মল্লারপুরের পারচন্দ্রহাট গ্রামের ক্যানেল পাড়ে নেশার আসর বসায় তারা। সেই আসরে নিজেদের মধ্যে বচসা বাধে। এরপরই ভারী কিছু দিয়ে স্বপনের ঘাড়ে আঘাত করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিসের প্রাথমিক ধারণা, সম্ভবত হাতুড়ি দিয়ে মারা হয়। ঘটনাস্থলেই স্বপনবাবু অচৈতন্য হয়ে পড়েন। সেই সময় ওই পথ ধরে টেটোয় চেপে ইঁদুরিপাড়া গ্রামের কয়েকজন বাড়ি ফিরছিলেন। ওই তিন সঙ্গী টোটো থামিয়ে স্বপনবাবুকে দেখিয়ে বলে, প্রচুর মদ খেয়েছে। ওর বাড়ি কুণ্ডলায়। টোটো করে পৌঁছে দিলে ভালো হয়। সেই মতো ওই যাত্রীরা স্বপনবাবুকে বাড়ি পৌঁছে দেয়। নেশায় বুঁদ হয়ে রয়েছে ভেবে মাথায় জল ছিটিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করেন মেয়ে জুলি বাগদি। কিন্তু তারপরও সুস্থ না হওয়ায় তিনি বাবাকে নিয়ে সাঁইথিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে আসলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। 

    জুলি বাগদি বলেন, সকালে ইঁদুরিপাড়া গ্রামের এক ব্যক্তি বাবাকে কাজে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। বিকেলে তিনটের সময় অপরিচিত কয়েকজন বাবাকে অচৈতন্য অবস্থায় টোটো থেকে নামিয়ে বাড়িতে রেখে চলে যায়। তখন বাবার খুবই খারাপ অবস্থা। ঘাড় নড়বড় করছিল। ফুলে ছিল। ঘাড় তুলতে পারছিল না। মাথায় জল দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করি। বাবা শুধু তিনটে কথা বলেছিল, আমার কেউ নেই। বেশিদিন বাঁচব না। কেউ মেরেছে কি না জানতে চাইলে বলেছিল হ্যাঁ। এরপরই তড়িঘড়ি বাবাকে নিয়ে সাঁইথিয়া হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক মারা গিয়েছে বলে জানিয়ে দেন। তাঁর অভিযোগ, বাবার ঘাড়ে ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলা হয়েছে।  তিনি ময়ূরেশ্বর থানায় বাবাকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ জমা দেন। সেই অভিযোগ পত্রে মল্লারপুর থানাকেও যুক্ত করেছেন তিনি।  

    মল্লারপুর থানার পুলিস তদন্তে নেমে মঙ্গলবার সকালে মৃত প্রৌঢ়ের তিন সঙ্গীকে আটক করে। প্রাথমিকভাবে পুলিস জানিয়েছে, নেশার আসরে ওদের মধ্যে বচসা হয়। তখনই স্বপন বাগদির ঘাড়ে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয়। পরে ওই প্রৌঢ় মারা যান। এদিন মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য সিউড়ি হাসপাতালে পাঠানো হয়। জুলি বলেন, মা অনেক আগেই মারা গিয়েছেন। এবার বাবাও চলে গেল। কার কাছে থাকব? বাবাকে যারা নির্মমভাবে খুন করল তাদের কঠোর শাস্তি চাইছি। ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকাজুড়ে। 
  • Link to this news (বর্তমান)