• নাবালক ও নেশাগ্রস্ত টোটো চালকদের জন্য বাড়ছে দুর্ঘটনা
    বর্তমান | ০৪ জুন ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: বিগত কয়েক বছরে রামপুরহাট মহকুমার মুরারই, নলহাটি, রামপুরহাট, মাড়গ্রাম, ময়ূরেশ্বর সহ সর্বত্র হু হু করে বেড়েছে টোটোর সংখ্যা। বেকার যুবকরা রোজগারের আশায় টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন রাস্তায়। তাতে বহু মানুষের সুবিধা হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যানজট। শহরজুড়ে বেড়েছে রুটহীন টোটোর সংখ্যা। অন্যদিকে সর্বত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নাবালক টোটো চালকরা। তাদের মুখে হাল্কা গোঁফের রেখা। 

    প্রশ্ন উঠছে, তাই কি বাড়ছে এত দুর্ঘটনা? সাধারণ মানুষ অবশ্য বলছেন, নিত্যদিন নাবালক, অপটু, নেশাগ্রস্ত টোটো চালকদের দ্বারা আহত হচ্ছেন পথচারীরা। দু-একটি নিহতের ঘটনাও ঘটেছে। স্বভাবতই অনিয়ন্ত্রিত টোটো চলাচল সাধারণ মানুষের পথ নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। যদিও হেলদোল নেই পুলিস প্রশাসনের।

    বহু টোটোর রেজিস্ট্রেশন নম্বর নেই। নেই সরকারি অনুমোদন। ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে যাত্রীদের ক্ষতিপূরণের সুযোগও নেই। তাই প্রথম থেকেই অবৈধ যান হিসাবে চিহ্নিত টোটো। তারপরও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে চলেছে টোটোর সংখ্যা। যার ফলে নিত্যদিন যানজটের মুখে পড়তে হচ্ছে নাগরিকদের। সেই সঙ্গে ছোটখাট দুর্ঘটনা, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় টোটো চালানো, অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়া নিয়ে অসন্তোষ লেগেই আছে। এখন দোসর হয়েছে নাবালক টোটো চালকদের দৌরাত্ম্য। শহরের ভিতর থেকে গ্রামের রাস্তা তো রয়েছেই, জাতীয় সড়কেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তারা। কখন, কী বিপদ ঘটে যায়, সেই আশঙ্কায় সিঁটিয়ে থাকেন যাত্রীরা। অল্প বয়সিদের হাতে টোটোর স্টিয়ারিং থাকায় প্রায়ই ধাক্কা লেগে জখম হচ্ছেন পথচারীরা। নিহতের ঘটনাও ঘটছে। 

    মুরারইয়ের বাসিন্দা ইকবাল খান বলেন, দিন দিন নাবালক টোটো চালকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কিছুদিন আগে এমনই এক টোটোর ধাক্কায় একজন মারাও যান। অনেকে জখম হয়েছেন, কারও পা ভেঙেছে। পুলিসকে জানালে বলা হচ্ছে, টোটো যানটাই অবৈধ। এমভিআই অ্যাক্টের মধ্যে পড়ছে না। অবৈধ যানের বিরুদ্ধে কী আর লিগ্যাল অ্যাকশন নেব? ক্ষতিপূরণের দাবি জানালে অভিভাবকরা বলছেন, গরিব মানুষ, টাকা পাব কোথায়? তাহলে নাবালকরা কেন টোটো চালাবে? প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ। 

    রামপুরহাটের বাসিন্দা সর্বাণী মণ্ডল বলেন, টোটো এখন নাগরিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁডিয়েছে। বেকার, গরিব মানুষ জীবিকার স্বার্থে এই পেশা বেছে নিচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু প্রতিদিন তাঁদের অপটু হাতে ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা। এতে বাড়ছে আতঙ্ক। তবুও টোটো নিয়ন্ত্রণে পুলিস প্রশাসনের সদর্থক ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না।  

    উল্লেখ্য, কয়েকমাস আগে রামপুরহাট মহকুমা জুড়ে টোটো নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ করা হয়েছে। টোটোর গায়ে বারকোড লাগানো থেকে ওয়ান ওয়ে এবং নাবালক টোটো চালালেই ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়। গ্রামের টোটো শহরে চলতে দেওয়া হবে না বলেও নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। কিন্তু কে মানে কার নিষেধাজ্ঞা! উল্টে গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নাবালক টোটো চালক। যদিও মহকুমা শাসক সৌরভ পান্ডে বলেন, প্রায়ই টোটোর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আটকের পাশাপাশি জরিমানা করা হচ্ছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)