ইন্দ্রজিৎ রায়, বোলপুর: বিএমওএইচ হওয়া সত্ত্বেও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের প্যাডে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের প্রেসক্রিপশন লিখে বিপাকে পড়লেন চিকিৎসক। রামপুরহাট-১ ব্লকের বিএমওএইচ হিটলার চৌধুরীর ভূমিকায় জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে। আইসিকে আশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকির ঘটনায় তদন্ত করছে পুলিস। হিটলারবাবুর পরামর্শেই কেষ্ট পাঁচদিন বিশ্রামে আছেন। শনি ও রবিবার পুলিসের কাছে হাজিরার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণ দেখিয়েই তিনি গরহাজির ছিলেন। তাঁর আইনজীবীরা ওই চিকিৎসকের লেখা প্রেসক্রিপশন পুলিসকে দিয়েছেন। তাতেই বিড়ম্বনায় পড়েছে রামপুরহাট স্বাস্থ্যজেলা। কারণ তিনি যে কাজ করেছেন তা আইনত করা যায় না বলে জানিয়েছেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক।
আইসিকে ফোনে হুমকি ও গালির ঘটনায় এই প্রেসক্রিপশন নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত। ‘অসুস্থ’ অনুব্রত হাজিরা এড়িয়ে গত শনিবার দলের পার্টি অফিসে গেলেও তারপর থেকে তিনি কার্যত গৃহবন্দি। এমতাবস্থায় বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে শনিবার রাতে তাঁকে ‘রেস্ট’ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বেশকিছু ওষুধ ও পরীক্ষার কথা লেখা হয় ওই প্রেসক্রিপশনে। ওই মেডিক্যাল কলেজের কর্ণধার অনুব্রতর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। গোরু পাচার মামলায় যুক্ত সন্দেহে সিবিআই ও ইডি তাঁকে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদও করেছে। প্রেসক্রিপশনে উল্লেখ করা রেজিস্ট্রেশন নম্বর অনুযায়ী ওই চিকিৎসকের নাম হিটলার চৌধুরী।
প্রেসক্রিপশন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অনুব্রতর ব্লাড প্রেসার ১৩০/ ৮০, যা স্বাভাবিক। তাঁর নাড়ির স্পন্দনের গতি প্রতি মিনিটে ১১০, যা স্বাভাবিকের থেকে সামান্য বেশি। এই উপসর্গ সাধারণত মানসিক উদ্বেগজনিত কারণ থেকে হতে পারে বলেই চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। ওই প্রেসক্রিপশনে অনুব্রতর গলায় ইনফেকশন, জ্বর, হাইপ্রেসার প্রভৃতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
তাঁর শারীরিক অবস্থা খতিয়ে দেখতে চেস্ট এক্স-রে, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, টাইফয়েড জাতীয় জ্বর আছে কি না জানতে রক্ত পরীক্ষা, হার্টের অবস্থা দেখার জন্য ইসিজি সহ একাধিক পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন ওই চিকিৎসক। মোট সাতরকম ওষুধ খাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন। তৃণমূল নেতাকে পাঁচদিন বিশ্রাম নিতেও বলেছেন চিকিৎসক।
বিএমওএইচের দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও এভাবে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের প্যাডে প্রেসক্রিপশন লেখা যায় কি? রামপুরহাট স্বাস্থ্যজেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শোভন দে বলেন, আইনত তা করা যায় না। এবিষয়ে হিটলারবাবুর সঙ্গে আমার কোনও কথা হয়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোনওকিছু জানতে চায়নি। এটা কেউ করতে পারেন না। যদি করে থাকেন নিজের দায়িত্বে করেছেন। আইন অমান্যের অভিযোগ যদি ওঠে, কেউ যদি তার সীমা লঙ্ঘন করেন সেক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী ডিপার্টমেন্টাল অ্যাকশন নেওয়া হবে। আমার হাতে কাগজপত্র এলে তারপরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। পুলিস চাইলে তদন্তের স্বার্থে সহযোগিতা করব। যদিও চিকিৎসক হিটলার চৌধুরীকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও ধরেননি। মেসেজেরও কোনও উত্তর দেননি।