নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: কারও লক্ষ্য সর্বভারতীয় নিট পরীক্ষা। কারও বা জয়েন্ট এন্ট্রান্স অ্যাডভান্সড। ওইসব সর্ব ভারতীয় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সংরক্ষণের সুবিধা কাজে লাগাতে ভুয়ো কাস্ট সার্টিফিকেট বানিয়েছিলেন অনেকেই। নথি জালিয়াতি করে এসসি, ওবিসি সার্টিফিকেট বানিয়ে ভবিষ্যতের ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় তমলুক মহকুমা থেকে বেশ কয়েকজনের কাস্ট সার্টিফিকেট নিয়ে সরাসরি নবান্নে অভিযোগ পৌঁছেছিল। সেসব খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল নবান্ন। তার পরিপ্রেক্ষিতে তমলুকের মহকুমা শাসক দিব্যেন্দু মজুমদার ন’ জনের কাস্ট সার্টিফিকেট বাতিল করেছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই ভুয়ো নথি দিয়ে এসডিও অফিস থেকে কাস্ট সার্টিফিকেট জোগাড় করেছিলেন বলে প্রশাসনের দাবি।
প্রশান্ত মাইতি, বিপ্লবকুমার প্রামাণিক, পুতুল সাঁতরা ও স্বপ্না পাল ভুয়ো নথি জমা করে তফসিলি সার্টিফিকেট বানিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। তাঁদের কাস্ট সার্টিফিকেটকে চ্যালেঞ্জ করে নবান্নে অভিযোগ পৌঁছেছিল। মহকুমা প্রশাসন তাঁদের নথি যাচাই করে সার্টিফিকেট বাতিল করে দিয়েছে। অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দপ্তরের ওয়েবসাইট থেকেও তাঁদের সার্টিফিকেট ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে শেখ আরিয়ান, সনিয়া খাতুন, আশাদুল আলি খান ও তাঁর ভাই আশফাক আলি খান, আনোয়ারা বেগম ভুয়ো নথি জমা করে ওবিসি সার্টিফিকেট বানিয়েছিলেন। ২০২১ সালে জানুয়ারি মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তমলুক মহকুমা শাসকের অফিস থেকে ওইসব সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছিল। নথি ঠিকমতো যাচাই না হওয়ার কারণে এই ঘটনা ঘটেছিল। নির্দিষ্ট কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়তেই তদন্ত হয়। তাতেই আসল রহস্য বেরিয়ে আসে।
এর আগেও তমলুক মহকুমায় এমন ঘটনা ঘটেছে। ২০২৩ সালে ২০ জুলাই তমলুক মহকুমা প্রশাসন একাসঙ্গে ১০৮টি সার্টিফিকেট বাতিল করেছিল। তারমধ্যে দু’টি এসটি সার্টিফিকেট, ২২টি এসসি সার্টিফিকেট এবং ৮৪টি ওবিসি সার্টিফিকেট ছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডাক্তারি ও ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশিকা পরীক্ষায় যোগ্যতা অর্জনের জন্য এই কৌশল নেওয়া হয়েছিল। তমলুক ব্লকের খামারচক হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অশোককুমার হাটুয়া, তাঁর ছেলে এবং মেয়ের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছিলেন মহকুমা শাসক। জেনারেল কাস্ট হওয়া সত্ত্বেও প্রথমে এসসি এবং পরবর্তীতে এসটি সার্টিফিকেট বানানোর ঘটনায় এফআইআর হয়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভুয়ো নথি দিয়ে সার্টিফিকেট তৈরির জন্য একটা চক্র সক্রিয়। তারা টাকার বিনিময়ে এই কাজ করে। এজন্য দুয়ারে সরকার ক্যাম্পকে বেছে নেওয়া হয়। এধরনের ক্যাম্পে প্রচুর আবেদন জমা পড়ে। সেইসব আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি করার টার্গেট থাকে। কম্পিউটারে অন্য কারও কাস্ট সার্টিফিকেটের নামের জায়গায় পরিবারের সদস্যের নাম বসিয়ে প্রিন্ট করা কপিকে প্রামাণ্য নথি হিসেবে জম করা হচ্ছে। উপযুক্ত ভেরিফিকেশন না হওয়ার কারণে এধরনের ভুল হচ্ছে। আবার কখনও কখনও অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দপ্তরের কর্মীও এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছেন। তমলুক ব্লকের অ্যাডিশনাল বিসিডব্লু ইন্সপেক্টরকে এজন্য বরখাস্ত করা হয়েছিল।
ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্র নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন তমলুকের রাসকা মহলের সভাপতি দেবেন্দ্রনাথ হেমব্রম ও তাঁর টিম। তিনি বলেন, কাস্ট সার্টিফিকেট ইস্যু করার সময় ঠিকমতো যাচাই হচ্ছে না। সেই সুযোগে ভুয়ো নথি জমা করে অনেকে সার্টিফিকেট বানিয়ে নিচ্ছেন। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, তমলুক মহকুমায় ন’ জনের কাস্ট সার্টিফিকেট বাতিল হয়েছে।