ভোররাতে ঝাড়গ্রামে হাতির পালের ব্যাপক তাণ্ডব, পালানোর পথে পিষে দিল প্রৌঢ়াকে
বর্তমান | ০৪ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্রাম: ঝাড়গ্রামে লোকালয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হাতির পাল। সোমবার ভোররাতে মানিকপাড়া রেঞ্জের ডানমারি গ্ৰামে ঢুকে পড়ে বড় হাতির দল। প্রথমে গ্ৰামের একটি মুদিখানায় ভাঙচুর চালায়। পালানোর সময় যত্নী ভক্তা(৫৭) নামে এক প্রৌঢ়াকে শুঁড়ে তুলে আছাড় মারে একটি হাতি। তারপর পা দিয়ে পিষে মারে। বনদপ্তরের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গ্রামের বাসিন্দারা। ডিএফও উমর ইমাম বলেন, প্রৌঢ়ার পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। হাতির হানা ঠেকাতে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। হাতির করিডরে ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হবে। এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হবে।
জমির ফসল উঠে গিয়েছে। ফল বাগানে ঢুকতে গেলে বাধা পাচ্ছে। তাতে খাবারের খোঁজে এবার বাড়িঘরে ঢুকে হামলা চালাচ্ছে হাতির দল। জেলার কোনও না কোনও গ্ৰামের নিরীহ মানুষ মারা যাচ্ছে। বনবিভাগ এক রেঞ্জ থেকে অন্য রেঞ্জে হাতি পাঠিয়ে দায় সারছে। অনেক সময় হাতি আসার খবর গ্ৰামবাসীরা আগাম জানতে পারছেন না। প্রাণের ঝুঁকি বাড়ছে। ডানমারি গ্ৰামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই রাতে বাঁদরভুলা বিটের পিয়ালগেড়িয়া গ্ৰামের হুলাটিম হাতির দলটিকে রামরামা বিটে ঠেলে দেয়। ভোর সাড়ে ৩টের সময় দলটি ডানমারি গ্ৰামে ঢুকে পড়ে। বেশিরভাগ বাসিন্দা সেইসময় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন। মুদিখানার দোকান ভাঙার শব্দে গ্ৰামবাসীরা জেগে ওঠেন। দোকানের পিছনেই ওই প্রৌঢ়ার মাটির বাড়ি। বাড়ির বাইরের বারান্দায় ঘুমিয়েছিলেন তিনি। হাতি এসেছে বুঝতে পেরে উঠান পেরিয়ে প্রতিবেশীর বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সেইসময় একটি হাতি তেড়ে এসে তাঁকে শুঁড় দিয়ে আছাড় মেরে পা দিয়ে পিষে দেয়।
এই ঘটনার পর গ্ৰামের বাসিন্দারা আতঙ্কে বাড়ি থেকে বের হননি। বনবিভাগের কর্মীরা এসে দেহ উদ্ধার করেন। মৃতার ছেলে সনাতন ভক্তা বলেন, মা ঘরের বাইরের বারান্দায় শুয়েছিল। দুই ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ঘরের ভিতরে শুয়েছিলাম। ভোর সাড়ে ৩টের নাগাদ কোনওকিছু ভাঙার জোর শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। হাতি খুব কাছে চলে এসেছে বুঝতে পারি। মা অন্ধকারের মধ্যে পালাতে গিয়ে উঠানে পড়ে গিয়েছিল। তখনই হাতিটি এসে মাকে মারে। ঘরের দেওয়ালেও একবার ধাক্কা মারে। সকাল পর্যন্ত ঘর থেকে ভয়ে বের হতে পারিনি।
পার্শ্ববর্তী জুয়ালভাঙা গ্ৰামের বাসিন্দা পল্লব সিংহ বলেন, ডানমারি গ্ৰামে জ্যেঠুর মুদিখানা রয়েছে। আমিও মাঝেমধ্যেই দোকানে বসি। দোকানের পাশেই ওই প্রৌঢ়ার বাড়ি। দোকানে ভাঙচুর চালিয়ে হাতি আলু, পেঁয়াজ, গুড় খেয়ে নিয়েছে। প্রচুর চিপসের প্যাকেটও খেয়েছে। শালবনীর জঙ্গলের দিকে দিকে হাতিগুলিতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। হুলাপার্টি তা না করে জুয়ালভাঙা গ্ৰামের বড়বনী জঙ্গলে হাতির পালকে নিয়ে যায়। আমরা আতঙ্কে রয়েছি। বন ও বনপ্রাণী সুরক্ষা আন্দোলনের কর্মী শ্যামসুন্দর মাহাত বলেন, নিরীহ গ্ৰামবাসীরা মারা যাচ্ছেন। সরকারকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।