• আপত্তিকর ছবি নিয়ে ব্ল্যাকমেল পুলিস অফিসারের, তদন্তে সত্যতা মিলতেই পিছু হটলেন শিক্ষকপত্নী
    বর্তমান | ০৪ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: তাঁর আপত্তিকর ভিডিও নিয়ে পুলিস অফিসার ব্ল্যকমেল করছেন বলে স্বয়ং পুলিস সুপারের কাছে নালিশ জানিয়েছিলেন সুতাহাটার শিক্ষকপত্নী। প্রাথমিকভাবে পুলিসের তদন্তে অভিযোগের সত্যতা সামনে আসে। তার জেরে অভিযুক্তকে পাঁশকুড়া থানা থেকে ক্লোজ করা হয়। পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে সুতাহাটার থানায় এফআইআর করা হয়। কিন্তু এবার পিছু হটলেন সেই অভিযোগকারিনী। তিনি পুলিস অফিসার শেখর নস্করের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ তুলে নিতে চান বলে মহিষাদলের সার্কেল ইন্সপেক্টর অফিসে গিয়ে চিঠি দিয়েছেন। গত ২জুন তাঁর দেওয়া ওই চিঠি মঙ্গলবার প্রকাশ্যে এসেছে। অভিযোগকারিনীর দাবি, দুই পরিবারের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। আমরা সেটা মিটমাট করে নিয়েছি। তাই আপাতত শেখর নস্করের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নিতে চাই।

    তমলুক পুলিস লাইনে ক্লোজ হওয়া অভিযুক্ত ওই পুলিস অফিসার বলেন, আমাদের নিজেদের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। তারমধ্যে দু’পক্ষের মধ্যে মিটমাট হয়েছে। ওই গৃহবধূ তাঁর অভিযোগও তুলে নিতে চেয়েছেন। সেজন্য চিঠিও দিয়েছেন।

    উল্লেখ্য, জেলা পুলিসের অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর শেখর নস্কর সুতাহাটা থানায় কর্মরত থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে এক শিক্ষক পরিবারের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। ওই পুলিস অফিসার নিজের বাড়ি তৈরি ও মেয়ের বিয়ের জন্য ওই পরিবার থেকে ১০ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছেন বলেও শিক্ষকপত্নী অভিযোগ করেছেন। ধার নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন ওই পুলিস অফিসারও। ওই শিক্ষকের বাড়িতে তাঁর অবাধ যাতায়াত ছিল। ওই শিক্ষকের বাড়িতেই অভিযুক্ত শেখরবাবুর ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান পর্যন্ত হয়েছে।

    সুতাহাটা থেকে পাঁশকুড়া থানায় বদলি হওয়ার পর ওই পুলিস অফিসার তাঁর নিজের মোবাইলে রেখে দেওয়া শিক্ষকের স্ত্রীর আপত্তিজনক ভিডিও নিয়ে ব্ল্যাকমেল করছিলেন বলে অভিযোগ। তাঁর প্রস্তাবে রাজি না হলে সেই ভিডিও গৃহবধূর স্বামী সহ পরিবারের অন্যদের মোবাইলে পাঠানোর হুমকি দেন বলেও অভিযোগ তোলা হয়। এমনকী, ওই পুলিস অফিসার শিক্ষকের পরিবারের সদস্যদের খুনের হুমকিও দিয়েছেন বলে শিক্ষকপত্নীর দাবি। এনিয়ে তিনি ২১মে পুলিস সুপারের পাবলিক গ্রিভান্স সেলে একটি চিঠি দেন। ওই পুলিস অফিসার যাতে মোবাইলে তাঁর আপত্তিকর ভিডিও ডিলিট করেন সেই আর্জিও জানান। 

    পাবলিক গ্রিভান্স সেলের ওই গুরুতর অভিযোগ নিয়ে পুলিস সুপার সুতাহাটা থানার পুলিসকে একটি এনকোয়ারির নির্দেশ দেন। ওই থানার সাব ‌ইন্সপেক্টর গৌরব মিত্র প্রাথমিক তদন্ত করেন। তাতে জানা যায়, অভিযোগের সারবত্তা রয়েছে। এরপরই সময় নষ্ট না করে ৩০মে অভিযুক্ত এএসআইকে পাঁশকুড়া থানা থেকে পুলিস লাইনে ক্লোজ করা হয়। সেইসঙ্গে একই দিনে সুতাহাটা থানায় তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়। 

    এফআইআর দায়ের হ঩তেই অভিযোগকারী শিক্ষকপত্নী পিছু হটার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি শেখর নস্করের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে চান বলে জানিয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, ওই শিক্ষক পরিবারের সঙ্গে অভিযুক্ত পুলিস অফিসারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। তারপর ওই শিক্ষকের স্ত্রীর অভিযোগ সামনে আসতেই এলাকায় হইচই পড়ে যায়। বুধবার ওই শিক্ষকপত্নী বলেন, দুই পরিবার আলোচনার মাধ্যমে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নিয়েছি। তাই আমি অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।
  • Link to this news (বর্তমান)