কিডনি বিক্রির জন্য আধার তথ্য জাল, ভগবানগোলার রৌশানকে বানানো হয়েছিল গুড্ডু কুমার
বর্তমান | ০৪ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: কিডনি বিক্রির জন্য নিমেষে বদলে ফেলা হয় কিডনিদাতার পরিচয়। দাতার সম্মতি পেলেই কয়েকদিনের মধ্যেই তৈরি হয়ে যায় নতুন আধার কার্ড। কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করার জন্য যাবতীয় নথিপত্র তৈরি করা হয় ওই নতুন আধার কার্ডের ভিত্তিতে। শুধু আধার কার্ড নয়, কিডনিদাতার নকল মা-বাবা ও স্ত্রী বানিয়ে দেয় বিহারের কিডনি গ্যাং। মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার রৌশান জামানের কিডনি নেওয়ার আগে তাঁরও পরিচয় বদলে নতুন মা বাবা খুঁজে দেয় এই কারবারিরা। রৌশানের নতুন পরিচয় হয় গুড্ডু কুমার। সেই নামে নতুন আধার কার্ড তৈরি করে কারবারিরা। সেই ডকুমেন্টস নিয়েই বিহারে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজিরা দেয় রৌশান। সে স্বেচ্ছায় কিডনি দিতে চাইছেন, সেই বয়ান নিজের মুখে ম্যাজিস্ট্রেটকে বলে। এমনকী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সাজানো মা, বাবাদের হাজির করানো হয়। এভাবেই ভুয়ো নথি ও বাবা-মাকে হাজির করিয়ে বিহারের কিডনি গ্যাং মানব অঙ্গ পাচার করছে।
তাদের দাপট যে কতটা, তা কেউ ফাঁদে না পড়লে বুঝতে পারবে না। এখন এই গ্যাংয়ের নজরে পড়েছে এই রাজ্যের গরিব যুবকরা। মোটা টাকার টোপ দিয়ে তরতাজা ছেলেদের কিডনি কিনে নিচ্ছে। ‘অর্গান ডোনেশনে’র নিয়ম না মেনে শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে হস্তান্তর হচ্ছে মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। পাঁচ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কিডনি নিয়ে, ২৫ লক্ষ টাকায় তা অবৈধভাবে গ্রহীতাকে পাইয়ে দিচ্ছে বিহারের এই গ্যাং। যা নিয়েই উদ্বেগ বাড়ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন প্রোফাইলে ঢুকে কিডনি গ্যাংয়ের সদস্যরা বাছাই করছে কাদের টোপ দেওয়া যায়। আর্থিক কষ্ট আছে বা টাকার দরকার আছে, তাঁদের বিভিন্ন পোস্ট বিচার বিশ্লেষণ করে টোপ দেয়।
এই গ্যাং যুবকদের প্রথমে কিডনি ডোনেট গ্রুপের সদস্য হওয়ার জন্য লিঙ্ক পাঠায়। সেই লিঙ্কের মাধ্যমে যদি কেউ ওই গ্রুপে জয়েন করে তাহলে তাঁকে নানা টোপ দেওয়া হয়। আর্থিক প্রলোভনের পাশাপশি মহৎ কাজের সহানুভূতি দেখিয়ে কিডনি বিক্রির সুবিধা বোঝানো হচ্ছে বাংলার যুবকদের। একবার দাতার সম্মতি মিললেই নিমেষে মধ্যে কাগজপত্র তৈরি করে বিহার থেকে এজেন্ট পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর দাতাকে বিহারে নিয়ে গিয়ে আধার কার্ড থেকে সমস্ত কাগজ বেআইনিভাবে তৈরি করে কিডনি পাচার করে দেওয়া হয়। বহরমপুরের ক্যাসিনো প্রতারণা মামলার তদন্তে নেমে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেল পুলিস। অনলাইন ক্যাসিনো গেম খেলে লক্ষ লক্ষ টাকা দেনা করে নিজের কিডনিও বেচে দিয়েছে রৌশান। মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার বাসিন্দা রৌশানকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করে বিহারের কিডনি গ্যাংয়ের ব্যাপারে জানতে পেরেছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। পাঁচ লক্ষ টাকার বিনিময়ে রৌশানের কাছ থেকে কিডনি কিনে ২৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি করেছে ওই গ্যাং।
জেলা পুলিসের এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, রৌশানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা চমকে উঠি। ও যা যা বলেছে তা যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় কিডনি বিক্রি গ্রুপে ঢুকে বিহারে গিয়ে নিজের কিডনি বিক্রি করেছে। এমনকী ওকে বিহারের বাসিন্দা বানিয়ে অন্য নামে আধার কার্ড তৈরি করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে।