গোবরডাঙায় গাছ থেকে আম পাড়া নিয়ে বিবাদের জেরে খুন, গ্রেপ্তার ১
বর্তমান | ০৪ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: গাছ থেকে আম পাড়া নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বিবাদ। পরে তা হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ায়। এই ঝামেলা চলাকালীন এক যুবককে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল পড়শির বিরুদ্ধে। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে প্রথমে হাবড়া হাসপাতালে এবং পরে বারাসত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার সেখানেই মৃত্যু হয় বসির মণ্ডল (৩৩) নামের ওই যুবকের। ঘটনাটি ঘটেছে গোবরডাঙা থানার ঝনঝনিয়া পশ্চিমপাড়া এলাকায়। মৃতের পরিবারের সদস্যরা অভিযুক্ত রজিবুল মণ্ডলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন থানায়। ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিল রজিবুল। গোবরডাঙা থানার ওসি পিঙ্কি ঘোষের নেতৃত্বে পুলিসের টিম সোমবার রাতভর তল্লাশি চালায় বিভিন্ন এলাকায়। অবশেষে মঙ্গলবার ভোরে রজিবুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। গোবরডাঙা থানার পুলিস জানিয়েছে, ধৃতের পাঁচদিনের পুলিসি হেফাজত হয়েছে। তাকে জেরা করে তদন্তের কিনারা করার চেষ্টা চলছে। এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিস পিকেট বসানো হয়েছে।
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোবরডাঙা থানার বেড়গুম ১ নম্বর পঞ্চায়েতের ঝনঝনিয়া পশ্চিমপাড়া এলাকায় একটি আমবাগান রয়েছে। সেখানে বাচ্চারা খেলা করে। রোদের তাপ থেকে রেহাই পেতে গ্রামের অনেকেই মাঝেমধ্যে এই বাগানে বসে একটু জিরিয়ে নেন। রবিবার দুপুরে কয়েকজন কিশোর আমবাগানে খেলছিল। কেউ কেউ গাছ থেকে আম পাড়ছিল। তা নিয়ে দুই কিশোরের মধ্যে বিবাদ হয়। পরে তা হয় মারপিট পর্যন্ত গড়ায়। দুই কিশোরের মধ্যে একজন বসিরের ছেলে, অন্যজন রজিবুলের ছেলে। বসির ও রজিবুল এলাকায় বন্ধু বলেই পরিচিত। আমবাগানে গণ্ডগোলের খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে চলে আসেন বসির। সেই সময় ওই বাগানেই ছিল রজিবুল। সে আম পাড়ছিল। ছেলেদের ঝামেলার মধ্যে তাদের বাবারা ঢুকে পড়ায় বিষয়টি আরও জটিল হয়ে পড়ে। বসির ও রজিবুলের মধ্যে প্রথমে ধাক্কাধাক্কি হয়। বাগানে থাকা অন্য লোকজন তখনকার মতো তাঁদের সরিয়ে দেন। কিন্তু অশান্তি লাগাম পড়েনি। অভিযোগ, এরপরেই রজিবুল আচমকা চড়াও হয় বসিরের উপর। তাঁর মাথা, ঘাড়, শিরদাঁড়ায় এলোপাথাড়িভাবে মারা হয়। এরপর আমবাগানেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। স্থানীয় ও পরিবারের লোকজন তড়িঘড়ি বসিরকে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে বারাসত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, মারধরের ফলে বসিরের স্পাইনাল কর্ডে গুরুতর চোট লাগে। সোমবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই মৃত্যু হয় বসিরের। ঘটনার পর পালিয়ে গিয়েছিল রজিবুল। মৃতের পরিবার রজিবুলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন গোবরডাঙা থানায়। মৃতের দিদি নাজিয়ারা খাতুন বলেন, বাচ্চাদের সামান্য গণ্ডগোলকে ঘিরে যেভাবে ভাইকে পিটিয়ে খুন করা হল, তা মানা যায় না। আমরা অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। অনিচ্ছাকৃত খুনের দায় স্বীকার করে আদালতে যাওয়ার পথে রজিবুল বলে, গণ্ডগোল মিটে যাওয়ার পর আমি দাঁড়িয়েছিলাম। বসির এসে আমার গলা টিপে ধরে গালিগালাজ করে। তখন আমিও হাত চালিয়ে দিই।