নাবালিকার বিয়েতে কব্জি ডুবিয়ে ভূরিভোজ! জেল-জরিমানা আমন্ত্রিতেরও, কড়া রাজ্য
বর্তমান | ০৪ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বিয়েবাড়ির ভোজ খেতে গিয়ে ঠাঁই হতে পারে সোজা শ্রীঘরে! পোলাও, মাটনের পরিবর্তে জুটতে পারে পুলিসের লাঠির বাড়ি! আপাতভাবে চমকে ওঠার মতো বিষয় হলেও আইনেই রয়েছে এই বিধান। তবে যে কোনও বিয়েতে এমন ‘পুলিসি আপ্যায়ন’-এর আশঙ্কা নেই! আইন অনুযায়ী, পাত্র-পাত্রী যদি নাবালক- নাবালিকা হয়, তাহলে মা-বাবা, শ্বশুর-শাশুড়ির পাশাপাশি শাস্তির মুখে পড়তে হবে ভোজ খেতে আসা আমন্ত্রিতদেরও। ছাড় পাবেন না পুরোহিত, নাপিত থেকে শুরু করে ভোজের আয়োজনে থাকা ক্যাটারার, ডেকরেটররা। তবে ঘটনা হল, আইনি সংস্থান থাকলেও এসব ক্ষেত্রে আমন্ত্রিতের জেল-জরিমানার কথা খুব একটা শোনা যায়নি। যদিও প্রশাসনের তৎপরতায় নাবালিকার বিবাহ উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার উদাহরণ কম নেই। এই প্রেক্ষাপটে বাল্যবিবাহের মতো গভীর সামাজিক সমস্যাকে একেবারে মূল থেকে উৎপাটন করতে তৎপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তাই সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রশাসনিক তৎপরতার পাশাপাশি এই নিয়ম কার্যকর করে কড়া বার্তা দিতে চাইছে রাজ্য।
পঞ্চম জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য জরিপের হিসেব অনুযায়ী, পূর্ব মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, বাঁকুড়া, কোচবিহার, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ দিনাজপুরের মতো জেলা থেকে অধিকাংশ বাল্যবিবাহের খবর মিলেছে। তবে ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের হাত ধরে নাবালক-নাবালিকাদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ঘটনা নিম্নমুখী। এই অবস্থায় ২০০৬ সালের বাল্যবিবাহ রোধ আইন অনুযায়ী তৈরি গাইডলাইন পাঠিয়ে জেলা প্রশাসনগুলিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দপ্তরের তরফে গত ১৫ মে এই মর্মে চিঠি ও নির্দেশিকার প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে। সেই মতো কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে জেলায় জেলায়। একাধিক জেলার সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা জানিয়েছেন, এখনও এমন কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা ভাবেন যত তাড়াতাড়ি মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেওয়া যায়, ততই ভালো। এসব ক্ষেত্রে পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়-পরিজনদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের উচিত, অভিভাবকদের বুঝিয়ে বাল্যবিবাহ ঠেকানো। তাতে যদি কাজ না হয়, সরাসরি পুলিস-প্রশাসনকে খবর দেওয়া দরকার। উল্টে তাঁরাই অনেক সময় কব্জি ডুবিয়ে পেটপুজোয় ব্যস্ত থাকেন। তাই স্কুল থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় বাল্যবিবাহ বিরোধী প্রচারে নিয়ম করে বলা হচ্ছে, নাবালিকার বিয়েতে ভোজ খেতে গিয়ে গ্রেপ্তার হতে পারেন আমন্ত্রিতও। এ সংক্রান্ত আইনের কথাও জানানো হচ্ছে মানুষকে। এমনকী, রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের বিভিন্ন কর্মশালাতে নিয়ম করে আমন্ত্রিতদের গ্রেপ্তারির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে বলে জানান কমিশনের চেয়ারপার্সন তুলিকা দাস।
ইতিমধ্যে বীরভূম, দার্জিলিং, মালদহ, জলপাইগুড়ি, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ সহ বিভিন্ন জেলায় আইনের এই ধারা উল্লেখ করে জিঙ্গেল, পোস্টার, হোর্ডিং তৈরি হয়েছে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে বাল্যবিবাহের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক তুলে ধরার পাশাপশি আইনের এই বিধানের কথাও বলা হচ্ছে। অনেক জেলায় সমাজ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ করা হচ্ছে।