নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও সংবাদদাতা, ইসলামপুর: মোবাইল চুরির অপবাদ। তার জেরে জিনস ওয়াশের কারখানায় এক শিশু শ্রমিককে উল্টো করে ঝুলিয়ে মারধরের পর বিদ্যুতের শক দেওয়ার অভিযোগ উঠল মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে। মধ্যযুগীয় এহেন নির্যাতনের ঘটনাটি রবীন্দ্রনগর থানার সন্তোষপুরের। ওই ভিডিও সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। যদিও এর সত্যতা যাচাই করেনি ‘বর্তমান’। ঘটনার পর থেকে খোঁজ নেই নির্যাতনের শিকার ওই নাবালকের। পলাতক মালিকপক্ষও। শিশু শ্রমিকের পরিবারের আশঙ্কা, তাকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। ইতিমধ্যেই তাঁদের তরফে রবীন্দ্রনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তার ভিত্তিতে অপহরণ, মারধরসহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিস। ঘটনার বিষয়ে খোঁজখবর শুরু করেছে রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনও। কমিশনের চেয়ারপার্সন তুলিকা দাস জানিয়েছেন, শিশুটিকে উদ্ধার করাই প্রাথমিক কাজ এখন। বিষয়টি নিয়ে পুলিস ও প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।
জানা গিয়েছে, নাবালকের বাড়ি ইসলামপুরের মাটিকুণ্ড-১ পঞ্চায়েতে। তার পরিবার সূত্রে খবর, এলাকারই বাসিন্দা মহম্মদ শাহেনশা, ফিরোজ আলম ও ফারুক আলম। এই তিন ভাইয়ের সন্তোষপুরের পীরডাঙা এলাকার জিনসের প্যান্ট ওয়াশ করার কারখানা রয়েছে। সেখানে কাজ করার জন্য ২০২৪ ডিসেম্বর মাসে ওই নাবালককে নিয়ে যায় তারা। চুক্তি হয়েছিল মাসিক ৮ হাজার টাকায়। সেখানে ওই শিশু শ্রমিকের দাদাও কাজ করতেন। কিন্তু নাবালকের পরিবারের অভিযোগ, বেতনের টাকা দেয়নি মালিক। ছেলের খোঁজখবরও মিলছিল না। সোমবার এক পরিচিতের থেকে সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ক্লিপ দেখে আঁতকে ওঠেন তাঁরা। পরিবারের এক সদস্য বলেন, ‘ভিডিওয় দেখলাম, আমাদের ছেলেকে উল্টো করে ঝুলিয়ে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর চলছে। একজন পাশে দাঁড়িয়ে আবার ইলেকট্রিকের শক দিচ্ছে। আর পাশে দাঁড়িয়ে একজন বলছে, তুই মোবাইল চুরি করেছিস! ’ এরপরই নাবালকের পরিবার মঙ্গলবার রবীন্দ্রনগর থানায় এসে লিখিত অভিযোগ করে। তাঁদের অভিযোগ, বেতন চাওয়াতেই ওই নাবালককে চুরির অপবাদ দিয়ে ‘খুন’ করেছে কারখানার মালিক শাহেনশা।
অভিযোগ পেয়েই রবীন্দ্রনগর থানার আইসি তৎক্ষণাৎ একটি টিমকে ওই কারখানায় পাঠান। দেখা যায়, তালা বন্ধ। তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে পুলিস অবশ্য কাউকে খুঁজে পায়নি। এমনকী নির্যাতনের শিকার ওই শিশু শ্রমিকের দেখাও মেলেনি। এরপরই পুলিস অপহরণ সহ একাধিক ধারায় কেস রুজু করে। পুলিস জেনেছে, এই ঘটনা গত বৃহস্পতিবারের। কারখানার ভিতরে শেডের ছাদে একটি কাঠের বিমের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে উল্টো করে ঝোলানো হয় নাবালককে। এরপর এক ব্যক্তি এক্সটেনশন কর্ড থেকে বিদ্যুতের শক দিতে শুরু করে। স্থানীয় বাসিন্দা অপু নামে এক যুবক জানিয়েছেন, ওই শিশু শ্রমিককে জখম অবস্থায় অন্যত্র নিয়ে যেতে দেখেছিলেন। কিন্তু ওই কিশোর এখন কোথায়, তা নিয়েই রহস্য।