শুভ্র চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা: পিজি হাসপাতালের চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও প্যাড জাল করে বহাল তবিয়তে চেম্বার করছিলেন ‘ডাক্তারবাবু’! বসিরহাটে তাঁর চেম্বার। ডাক্তার ইন্দ্রনীল বোস— এভাবেই নিজের পরিচয় দিতে স্বচ্ছন্দ ছিলেন তিনি। বসিরহাট ছাড়াও হাওড়ার আমতা সহ অন্যান্য জেলায় এভাবেই চলছিল চুটিয়ে প্র্যাক্টিস। তাঁরই এক সহযোগীকে পিজি হাসপাতালে করণিক পদে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা হাতানোই কাল হল। থানায় প্রতারণার অভিযোগ জমা পড়তেই সক্রিয় হয় পুলিস। তদন্তে জানা যায়, নিজেকে ডাক্তার বলে পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি আদতে একজন হাতুড়ে চিকিৎসক। তাঁর আসল নাম অনুপম বসু। নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ হাতে আসার পর অভিযুক্ত ভুয়ো ডাক্তারকে গ্রেপ্তার করে বসিরহাট থানার পুলিস।
তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, অভিযুক্ত বসিরহাটের একটি প্রাইভেট নার্সিংহোমে চেম্বার করতেন। চেম্বারে ঢোকার মুখে নেমপ্লেটে বড় বড় করে লেখা, ‘চেস্ট স্পেশালিস্ট ইন্দ্রনীল বোস’। পিজি’র মতো হাসপাতালের চিকিৎসক বলে এলাকায় প্রচার থাকায় তাঁর চেম্বারে রোগীর ভিড় লেগে থাকত। তিনি যে এসএসকেএমের চিকিৎসক, সেই কথা লেখা থাকত প্রেসক্রিপশনের প্যাডে রেজিস্ট্রেটশন নম্বরের পাশেই। ওই নার্সিংহোমের এক কর্মী তাঁর চেম্বারের রোগীদের লাইন দেখভাল ও অন্যান্য সহযোগিতা করতেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অভিযুক্ত তাঁকে বলেন, এসএসকেএম হাসপাতালে করণিক পদে লোক নেওয়া হবে। তিনিই গোটা প্রক্রিয়াটির দায়িত্বে আছেন। তবে চাকরি পেতে গেলে কিছু খরচপাতি করতে হবে। সেই প্রস্তাবে তিনি রাজি হলে দফায় দফায় প্রায় এক লক্ষ টাকা ভুয়ো চিকিৎসক হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ। পরে ওই কর্মী সবটা জানতে পেরে বসিরহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিস প্রতারণা সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে।
তদন্তে নেমে পুলিস প্রথমেই পিজি হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করে। জানা যায়, ইন্দ্রনীল বসু নামে বলে এক চিকিৎসক রয়েছেন। কিন্তু তিনি বসিরহাটের ওই নার্সিংহোমে বসেন না। অভিযুক্ত একই পরিচয় দিয়ে হাওড়ার আমতায় চেম্বার করছেন বলেও জানা যায়। আমতা থানা খবর পেয়ে অনুপম বসু নামে একজন হাতুড়ে চিকিৎসককে পাকড়াও করে। বসিরহাট থানার পুলিসের তদন্তেই ফাসে হয়ে যায় তাঁর কীর্তি। আরও জানা যায়, এসএসকেএমের চিকিৎসক ইন্দ্রনীলবাবু কিছুদিন আগে বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন এক রোগীর মাধ্যমে। ওই রোগী তাঁকে তাঁর রেজিস্ট্রেশন নম্বর লেখা জাল প্যাড দেখান। তখন চিকিৎসক ইন্দ্রনীলবাবু অভিযুক্ত হাতুড়ে চিকিৎসককে সতর্ক করে দেন। তারপরেও বিভিন্ন জায়গায় চেম্বার খুলে প্র্যাকটিস চালাচ্ছিলেন। বসিরহাটে চেম্বারের কথা জানা যায়। এরপরই বসিরহাট থানা আদালতের অনুমতি নিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তদন্তে জানা যায়, বছর তিনেক ধরে তিনি ওই চিকিৎসকের নাম নিয়ে চেম্বার করছিলেন। যেসব জায়গায় তিনি চেম্বার খুলেছিলেন, সবক’টি জায়গা চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিস।