• আঠারোয় স্বপ্নপূরণ কোহলির, প্রথম বার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন বেঙ্গালুরু, দুই দলের হয়ে ট্রফি জেতার রেকর্ড হল না শ্রেয়সের
    আনন্দবাজার | ০৪ জুন ২০২৫
  • চার বল বাকি থাকতেই মুখে হাত বিরাট কোহলির। চোখ ঢেকে ফেললেন তিনি। বোঝা যাচ্ছিল, চোখের কোনা দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। খেলা শেষ না হলেও তত ক্ষণে খেলার ভাগ্য নির্দিষ্ট। জয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে বেঙ্গালুুরুর। তাই নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না কোহলি। কেরিয়ারে সব ট্রফি পেয়েছেন। আইপিএল বাকি ছিল। অবশেষে সেটাও এল। ১৮তম বছরে আইপিএল জিতলেন কোহলি। স্বপ্নপূরণ হল তাঁর।

    দেখে বোঝা যাচ্ছিল না খেলা কোথায় হচ্ছে? অহমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম? না বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী? গোটা স্টেডিয়াম লাল। দুই ফাইনালিস্ট বেঙ্গালুরু ও পঞ্জাবের জার্সিতে লালের আধিক্য বেশি থাকলেও গ্যালারিতে টেক্কা দিলেন বেঙ্গালুরুর সমর্থকেরা। ১৯১ রান তাড়া করতে নেমে পঞ্জাবের প্রতিটা উইকেট পড়ার সঙ্গে ডেসিবেল আরও বাড়ল।৯০ হাজারের বেশি দর্শক ছিল মাঠে। শেষ দিকে আরসিবি, আরসিবি, কোহলি, কোহলি চিৎকারে কান পাতা যাচ্ছিল না। সেই সমর্থন কাজে লাগল বেঙ্গালুরুর। নইলে এই মাঠে ১৯০ রান করে জেতা সহজ নয়। সেটাই করে দেখাল বেঙ্গালুরু।

    এ বার যে আইপিএল নতুন চ্যাম্পিয়ন পেতে চলেছে তা রবিবারই ঠিক হয়ে গিয়েছিল। প্রশ্ন ছিল কে জিতবে? শ্রেয়সের পঞ্জাব? না কোহলি, রজত পাটীদারের বেঙ্গালুরু? শ্রেয়সের আইপিএল জেতার অভিজ্ঞতা রয়েছে। গত বারই কলকাতা নাইট রাইডার্সকে ট্রফি দিয়েছিলেন তিনি। সে দিক থেকে দেখতে গেলে অভিজ্ঞতা বেশি ছিল তাঁর। কিন্তু একা অধিনায়ক কী করবেন? চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে সকলকে ভাল খেলতে হয়। যেটা করে দেখাল বেঙ্গালুরু। একটা দল হিসাবে চ্যাম্পিয়ন হল তারা।

    খেলা শুরুর আগে পিচ পরীক্ষা করে ম্যাথু হেডেন বলেছিলেন, ২২০ রানের উইকেট। কিন্তু বেঙ্গালুরু খেলা শুরু করার পর কোহলিদের ব্যাটিং দেখে সেটা মনে হচ্ছিল না। বিশেষ করে কোহলি এ বারের আইপিএলে যে ভাবে ব্যাট করেছেন, ফাইনালে তা করলেন না। ৩৫ বল খেলে মাত্র তিনটে চার মেরেছেন তিনি। পঞ্জাবের বোলারের কোহলির বিরুদ্ধে শর্ট বলের পরিকল্পনা করেছিলেন। তাঁকে গুড লেংথে বল করছিলেন না। ফলে সামনের পায়ে শট মারার সুযোগ পাচ্ছিলেন না তিনি। স্কোয়্যারে খেলতে বাধ্য হচ্ছিলেন। বলের গতিরও হেরফের করছিলেন অর্শদীপ সিংহ, কাইল জেমিসেনরা।

    বাধ্য হয়ে দৌড়ে রানের উপর ভরসা রাখতে হচ্ছিল কোহলিকে। মনে হচ্ছিল, ২০ ওভার খেলার পরিকল্পনা করে নেমেছেন তিনি। বাকিরা তাঁর সঙ্গে খেলবেন। তাঁরা ঝুঁকি নেবেন। কোহলি শেষ দিকে হাত খোলার চেষ্টা করবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খেলতে পারলেন না কোহলি। আজমাতুল্লা ওমরজ়াইয়ের শর্ট বল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেন না। নিজের বলে ভাল ক্যাচ ধরলেন ওমরজ়াই। ৩৫ বলে ৪৩ রান করে আউট হলেন তিনি।

    তার পরেও কোহলিই বেঙ্গালুরুর সর্বোচ্চ স্কোরার। বাকি কেউ ৩০ রানও পার করেননি। তার পরেও ১৯০ রান করেছে বেঙ্গালুরু। সেটা তাদের দলগত খেলার ফল। প্রত্যেকে কিছু কিছু করে রান করেছেন। একটা সময় মনে হচ্ছিল, ১৭৫ রানের বেশি হবে না। ১৫ রান বেশি হওয়ার অবদান জিতেশ শর্মার। একার ব্যাটে বেঙ্গালুরুকে প্লে-অফের প্রথম দুই দলের মধ্যে রেখেছিলেন জিতেশ। এই ম্যাচেও জেমিসনের এক ওভারে দলের রান বাড়িয়ে দিলেন তিনি।

    বেঙ্গালুরুর কাছে চ্যালেঞ্জ কঠিন ছিল। পঞ্জাব যে ভাবে শুরু করেছিল তাতে তা আরও কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু নিজেদের উপর অহেতুক চাপ নেয়নি বেঙ্গালুরু। তারা জানত, উইকেট পড়লে পঞ্জাব চাপে পড়ে য়াবে। সেটাই হল। বেঙ্গালুরুর হয়ে খেলা ঘোরালেন ক্রুণাল পাণ্ড্য। মুম্বইয়ের হয়ে তিন বার আইপিএল জিতেছেন তিনি। জানেন, চাপের মুখে কী ভাবে খেলা ঘোরাতে হয়। সেটাই করলেন। চার ওভারে মাত্র ১৭ রান দিয়ে ২ উইকেট নিলেন তিনি। সেই চাপ সামলে উঠতে পারল না পঞ্জাব।

    জরুরি রানরেট যত বাড়ল তত চাপে পড়ল পঞ্জাব। তাদের ভরসা ছিল শ্রেয়সের উপর। কিন্তু এই ম্যাচে ব্যর্থ তিনি। অধিনায়ক ব্যর্থ হতেই ব্যর্থ হল দলও। একটার পর একটা উইকেট পড়ল। শশাঙ্ক সিংহ একাই লড়লেন। ৩০ বলে ৬১ রান করলেন। কিন্তু পাশে কাউকে পেলেন না তিনি। শেষ পর্যন্ত ১৮৪ রানে শেষ হল পঞ্জাবের ইনিংস। ৬ রানে চ্যাম্পিয়ন হল বেঙ্গালুরু।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)