• গুরুগ্রামে কলকাতা পুলিশের হাতে ধৃত তরুণীর কেস ডায়েরি তলব করল হাই কোর্ট
    আনন্দবাজার | ০৪ জুন ২০২৫
  • গুরুগ্রাম থেকে তরুণীকে গ্রেফতারের ঘটনায় রাজ্যের কাছে কেস ডায়েরি তলব করল কলকাতা হাই কোর্ট। তরুণীর বিরুদ্ধে রাজ্যের অন্য থানায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত আপাতত স্থগিত থাকবে। তাঁর বিরুদ্ধে নতুন করে আর কোনও মামলা দায়ের করা যাবে না। রাজ্য সরকারকে এই বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য বলেছেন বিচারপতি। সঙ্গে আদালত এ-ও জানিয়েছে, বাক্‌স্বাধীনতার অধিকার থাকলেও কোনও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মন্তব্য করা যায় না। আগামী ৫ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।

    সমাজমাধ্যমে বিতর্কিত পোস্টের ঘটনায় পুণের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই পড়ুয়াকে সম্প্রতি গুরুগ্রাম থেকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। ওই গ্রেফতারির বিরুদ্ধে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন তরুণী। মঙ্গলবার বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের অবকাশকালীন বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে। এই ঘটনায় কলকাতার গার্ডেনরিচ থানায় দায়ের হওয়া মামলার কেস ডায়েরি জমা দিতে বলেছে আদালত। বিচারপতি জানিয়েছেন, পরবর্তী শুনানির দিন ওই কেস ডায়েরি আদালতে জমা করতে হবে রাজ্যকে।

    গত ১৫ মে কলকাতার একটি থানায় মামলা দায়ের হয়েছিল তরুণীর বিরুদ্ধে। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরবর্তী সময়ের ওই পোস্টটির কারণে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর আশঙ্কা করছিল পুলিশ। সেই মতো ভারতীয় ন্যায় সংহিতার নির্দিষ্ট ধারায় এফআইআর রুজু করা হয়। এর পাশাপাশি শান্তিভঙ্গের চেষ্টা, ইচ্ছাকৃত ভাবে কারও ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত এবং উস্কানিমূলক বিবৃতির অভিযোগেও মামলা রুজু হয় পুণের ওই আইনের ছাত্রীর বিরুদ্ধে।

    মঙ্গলবার রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে সওয়াল করেন, ওই ছাত্রীর পোস্ট একটি ধর্মের মানুষের ভাবাবেগে আঘাত করেছে, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাঁর বক্তব্য, ম্যাজিস্ট্রেট আগেই জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে এখন কেন এই মামলায় হাই কোর্টের হস্তক্ষেপ চাওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন কল্যাণের। তিনি বলেন, “ওই ছাত্রীর জামিনের আবেদন করতে পারতেন। কেন রিট কোর্টে মামলা দায়ের করলেন?” অন্য দিকে অভিযুক্তের আইনজীবীর দাবি, তাঁর মক্কেলের গ্রেফতারি বেআইনি। তাঁর প্রশ্ন, “আইন মেনে কি গ্রেফতার করা হয়েছে? আমার মক্কেল কি সন্ত্রাসবাদী? একজন পড়ুয়াকে কি এ ভাবে গ্রেফতার করা যায়?” এই ঘটনায় হাই কোর্ট হস্তক্ষেপ করে যাতে তরুণীর জামিনে মুক্তির ব্যবস্থা করে, সেই আর্জিও জানান তিনি। ওই আইনজীবী দাবি করেন, এফআইআর দায়েরের পরে কোনও নোটিস ছাড়াই দু’দিনের মধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পুলিশের গ্রেফতারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন রয়েছে।

    দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, ছাত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁর পোস্ট দেশের একটি অংশের মানুষের ভাবাবেগে আঘাত করেছে। বাক্‌স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে। কিন্তু কোনও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মন্তব্য করা যায় না।

    তরুণীর গ্রেফতারির পরে কলকাতা পুলিশ সমাজমাধ্যমে জানিয়েছিল, এফআইআর রুজু করে তদন্ত শুরুর পরে অভিযুক্ত তরুণীকে একাধিক বার নোটিস পাঠানোর চেষ্টা করা হয় কিন্তু তাঁর কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এই অবস্থায় আদালত থেকে ওই তরুণীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)