ছেলে ও বৌমা সরকারি চাকুরে, আবাসের ঘর পেতে পুত্রের সঙ্গে বিচ্ছেদের নাটক বাংলার ‘দময়ন্তী’র?
আনন্দবাজার | ০৪ জুন ২০২৫
‘অন্দর সে মন অচ্ছা নহি লগতা।’ আবাসের বাড়ির জন্য অসুস্থতার নাটক করে চিকিৎসককে বলেছিলেন ‘আম্মাজি।’ ওয়েব সিরিজ় ‘পঞ্চায়েত’-এর দ্বিতীয় সিজ়নের সেই দৃশ্য দিয়ে শত ‘মিম’ রয়েছে সমাজমাধ্যমে। সরকারি যোজনার বাড়ি পাবেন বলে ছেলে জগমোহনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নেই বলে সরকারি কর্মীর কাছে দাবি করেছিলেন ওটিটি-র ওই বৃদ্ধা। নদিয়ার শান্তিপুরে বাস্তব ঘটনার তুলনা টানতে গিয়ে অনেকেই সেই দময়ন্তী দেবীর উদাহরণ টানলেন। প্রতিবেশীদের অভিযোগ, আবাস যোজনার বাড়ি পাওয়ার জন্য সরকারি চাকুরে ছেলে-বৌমার সঙ্গে সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন বৃদ্ধা। ‘নাটক’ করে বাড়ি বাগিয়েও নিয়েছেন। ইতিমধ্যে অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে প্রশাসন। যদিও উপভোক্তার দাবি, সন্তানেরা তাঁদের সত্যিই দেখেন না।
শান্তিপুর থানার নবলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা অঞ্জলি বসাকের পুত্র চাকরি করেন রেলে। পুত্রবধূ রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী। এ হেন অঞ্জলি আবাস যোজনায় বাড়ি পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। তাঁর দাবি, ছেলে-বৌমা তাঁকে দেখেন না। দু’জনে যথেষ্ট রোজগার করলেও তাঁর হাতে টাকাকড়ি দেওয়া হয় না। কিন্তু ভিন্ন কথা বলছেন প্রতিবেশীরা। স্থানীয় বাসিন্দা মন্টু বসাকের কথায়, ‘‘ওঁর ছেলে রেলে চাকরি করেন। বৌমা রাজ্য সরকারি কর্মী। সরকারি নিয়ম, পরিবারের কেউ সরকারি চাকরি করলে আবাস যোজনায় বাড়ি পাওয়া যাবে না। কিন্তু উনি কী ভাবে সরকারি ঘর পেলেন?’’ বস্তুত, ছেলে-বৌমার দোতলা বাড়ির পাশে মায়ের একতলা বাড়ির কাজ প্রায় শেষ। বিরোধীদের অভিযোগ, প্রভাব খাটিয়ে মায়ের নাম করে সরকারি সাহায্যে বাড়ি বাগিয়ে নিয়েছেন ছেলে। এ নিয়ে অভিযোগও দায়ের হয়েছে। ওই এলাকারই বাসিন্দা পলাশ দাশ শান্তিপুরের বিডিও-র কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে বাড়ি পেয়েছে ওই পরিবার। যে পরিবারে দু’জন সরকারি চাকরি করেন, তারা কী ভাবে সরকারি ঘর পেতে পারে? দুর্নীতি হয়েছে। খতিয়ে দেখুক প্রশাসন।’’
বাড়ি-বিতর্কে শোরগোল এলাকায়। এ নিয়ে উপভোক্তা অঞ্জলির দাবি, ‘‘আমরা স্বামী-স্ত্রী আলাদা থাকি। ছেলেরা আলাদা থাকে। আমরা তাঁত বুনে খাই। ছেলে আমাদের খেতে দেয় না। মানুষ হিংসা করে বলে এই অভিযোগ করেছেন।’’
অভিযোগের কথা কানে গিয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের। স্বদেশ দাস নামে শাসক দলের এক নেতা বলেন, ‘‘যাঁরা বাড়ি পাওয়ার যোগ্য, তাঁদের নামের একটি তালিকা বিডিও অফিসে জমা দিয়েছিলাম। তার ভিত্তিতেই বিডিও অফিস থেকে ‘ইনকোয়ারি’ হয়েছে। প্রশাসন যাঁদের যোগ্য মনে করেছে, তাদের ঘর দিয়েছে। এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।’’ অন্য দিকে, বিজেপি নেতা তথা শান্তিপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি চঞ্চল চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘অনিয়ম-বেনিয়ম তৃণমূলের স্বভাবে পরিণত হয়েছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল নেতারা যা নির্দেশ দিচ্ছেন, বিডিও-র প্রতিনিধিদল তা করতে বাধ্য হচ্ছে। যাঁরা যোগ্য তাঁরা ঘর পাচ্ছেন না। অযোগ্যেরা টাকার বিনিময়ে ঘর পেয়ে যাচ্ছেন। আমরা তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’’ সব শুনে শান্তিপুর ব্লকের বিডিও সঞ্জীব ঘোষ জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি এ নিয়ে একটি কথাও বলবেন না।