• ঐতিহ্যের মঞ্চে ‘হেরিটেজ ওয়াক’, অভিনব সিদ্ধান্ত বিশ্বভারতীর
    এই সময় | ০৪ জুন ২০২৫
  • এই সময়, শান্তিনিকেতন: বিশ্বের একমাত্র লিভিং বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বার ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ওয়াক’। পর্যটকদের কাছে এ বার শান্তিনিকেতন আশ্রম নতুন রূপে ধরা দেবে। আশ্রমের ‘কোর’ এরিয়া হেরিটেজ ওয়াকের মাধ্যমে ঘুরে দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বভারতী।

    ইতিমধ্যেই বিশ্বভারতীর ৮ জন কর্মীকে এই হেরিটেজ ওয়াকের গাইড হিসাবে ট্রেনিং দেওয়া শুরু হয়েছে। তাঁরা দু’জন করে মোট ৪টি দলে ভাগ হয়ে পর্যটকদের আশ্রম ঘুরিয়ে দেখাবেন। বর্ণনা করবেন আশ্রম প্রাঙ্গণের ঐতিহ্যবাহী ইতিবৃত্ত। ট্রেনিং দিচ্ছেন বিশ্বভারতীর মিউজিয়াম গাইড পূর্বা বন্দ্যোপাধ্যায়।

    বিশ্বভারতীর রবীন্দ্র ভবন কর্তৃপক্ষ একটি অনলাইন সিস্টেম চালু করছে, যেখানে হেরিটেজ ওয়াকের জন্য আবেদন করা যাবে। প্রাথমিক ভাবে, জনপ্রতি ২৫০–৩০০ টাকা প্রবেশমূল্যের কথা ভাবনা–চিন্তা করছে বিশ্বভারতী।

    প্রথম দিকে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রতি রবি ও বুধবার সকালে ও বিকেলে এই হেরিটেজ ওয়াকের পরিকল্পনা করা হয়েছে। দর্শকদের চাহিদা মতো আগামিদিনে সংখ্যা বাড়ানো হবে। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে অথবা অগস্টের প্রথম সপ্তাহেই শুরু হয়ে যাবে বিশ্বভারতীর হেরিটেজ ওয়াক।

    প্রতি বার ওয়াকে ২৫ জন অংশ নিতে পারবেন। শীতকালে পর্যটক বেশি হওয়ায় সারা দিনে নির্দিষ্ট সময় অন্তর একাধিক বার হেরিটেজ ওয়াকের পরিকল্পনা করছে বিশ্বভারতী।

    শান্তিনিকেতন আশ্রম প্রাঙ্গণের প্রাচীন ইতিহাস ও শতাব্দী–প্রাচীন স্মারকগুলি। এর জন্য ২০টি দ্রষ্টব্য স্থানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলি হলো, ছাতিমতলা, শান্তিনিকেতন গৃহ, উপাসনা গৃহ, আম্রকুঞ্জ, শাল বীথি, বেণু কুঞ্জ, মাধবীবিতান, দেহলী, নতুন বাড়ি, সন্তোষালয়, চিনা ভবন, হিন্দি ভবন, পূর্ব তোরণ, পশ্চিম তোরণ, সিংহ সদন, গৌর প্রাঙ্গণ, পাঠভবন, চৈত্য, দিনান্তিকা, ঘণ্টাতলা।

    ছাতিমতলা থেকে শুরু করে শান্তিনিকেতন আশ্রমের কোর এরিয়া ঘুরে হেরিটেজ ওয়াক শেষ হবে ফের ছাতিমতলায় রবীন্দ্র ভবনের গেটের উল্টো দিকে। হেরিটেজ ওয়াক দেড় ঘণ্টার হবে বলে স্থির করা হয়েছে।

    প্রথম পর্যায়ে কলা ভবন ও সঙ্গীত ভবনকে রাখা হয়নি। প্রাথমিক প্রয়োগটি সফল হলে ভবিষ্যতে ওই দুই প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করার কথা ভাবনা–চিন্তা করবে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।

    বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ বলেন, ‘আমরা খুব শীঘ্রই শান্তিনিকেতন আশ্রমের কোর এরিয়া ঘুরে দেখাতে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ওয়াক শুরু করছি।

    পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু হবে এই প্রজেক্ট। দর্শক তথা পর্যটকদের সংখ্যার উপরে নির্ভর করে এই প্রকল্পের দিন আরও বাড়ানো হবে। রবীন্দ্র অনুরাগীরা গাইডের সাহায্যে বিশ্বভারতীর শতাব্দী–প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখবেন। ইতিহাস জানতে পারবেন।’

    প্রসঙ্গত, কোভিড পরিস্থিতির জন্য ক্যাম্পাসে পর্যটকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও তৎকালীন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী আর ক্যাম্পাসে পর্যটকদের প্রবেশ করতে দেননি।

    এর মাঝে ২০২৩–এর ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্বভারতীকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ তকমা দেয় ইউনেস্কো। গত ১৯ মার্চ বিশ্বভারতীর স্থায়ী উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব নেন অধ্যাপক প্রবীরকুমার ঘোষ।

    জানা গিয়েছে, দায়িত্ব গ্রহণের পরের দিনই তিনি হেরিটেজ কমিটিকে নিয়ে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেন আগের মতো বিশ্বভারতী ক্যাম্পাস পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে৷ তবে কিছু বিধি-নিষেধের মাধ্যমে তা বাস্তবায়নের কথা বলেন। কারণ ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট রক্ষণাবেক্ষণের কিছু সুনির্দিষ্ট গাইড লাইন আছে। তা মেনেই এই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ওয়াকের উদ্যোগ নিল বিশ্বভারতী।

  • Link to this news (এই সময়)