দিগন্ত মান্না, পাঁশকুড়া
তাপপ্রবাহে পড়ুয়ারা যাতে কষ্ট না-পায়, সে জন্য আজ, বুধবার থেকে মর্নিং স্কুলের নির্দেশ দিয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। মঙ্গলবার সন্ধেয় পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের এক নির্দেশিকা জারি হওয়ার পরে বিপাকে পড়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। রাজ্যের সেই নির্দেশিকায় স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, লিখিত অনুমতি ছাড়া সকালে স্কুল করা যাবে না।
পূর্ব মেদিনীপুরে টানা কয়েকদিন ধরে চলছে তাপপ্রবাহ। তীব্র গরমের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় গরমের ছুটি। সোমবার সব স্কুল খুলে যায়। প্রথম দিনেই স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার ছিল বেশ কম। তার একটি অন্যতম কারণ তাপপ্রবাহ।
মঙ্গলবার জেলার তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়ে ফেলে। বেজায় গরমে নাজেহাল হয়ে পড়ে খুদে পড়ুয়ারা। তাপপ্রবাহজনিত কারণে প্রাথমিক স্কুলগুলোতে সকালে ক্লাস চালানোর আবেদন জানিয়ে সোমবার পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে চিঠি দেয় পূর্ব মেদিনীপুর প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান। চেয়ারম্যানের দাবি, পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ থেকে তাঁকে মৌখিক ভাবে নির্দেশ দেওয়া হয় পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে।
সেই মতো মঙ্গলবার দুপুরে স্কুল চলাকালীন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেয়, তাপপ্রবাহের কারণে ৪ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত জেলার সমস্ত প্রাথমিক এবং নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ে ক্লাস হবে। নির্দেশিকা হাতে পেয়ে শিক্ষকরা পড়ুয়াদের মর্নিং স্কুলের ব্যাপারে জানিয়ে দেন।
এ দিন সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তরফে একটি নির্দেশিকায় জানানো হয়, পর্ষদের লিখিত অনুমতি ছাড়া কোনও জেলা প্রাথমিক সংসদ মর্নিং স্কুলের নির্দেশিকা জারি করতে পারবে না। পর্ষদের সেই নির্দেশিকা হাতে পাওয়ার পর মাথায় হাত পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের।
মর্নিং স্কুলের নির্দেশ জারি করার পরে রাতের মধ্যে কী ভাবে সেই নির্দেশ প্রত্যাহার করা যাবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘পর্ষদের মৌখিক নির্দেশ মতো আমরা মর্নিং স্কুলের নির্দেশ দিয়েছিলাম। এখন বলা হচ্ছে পর্ষদের লিখিত অনুমতি লাগবে। আমরা ইতিমধ্যে সমস্ত স্কুলে মর্নিং সেশনের নির্দেশ দিয়ে দিয়েছি। কী করব এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। পর্ষদের নির্দেশকেও তো মান্যতা দিতে হবে। উপায় খুঁজতে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করছি।'
মর্নিং স্কুলের নির্দেশিকা জারি হওয়ার পরে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা। পাঁশকুড়ার পূর্ব বাকুলদা নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক রবীন্দ্রনাথ শাসমল বলেন, ‘পড়ুয়াদের নিয়ে ছেলেখেলা করা হচ্ছে। গত কয়েকদিনে তাপমাত্রা যে ভাবে বেড়েছে তাতে দুপুরে স্কুল চালানো খুব মুশকিল।
বুধবার থেকে মর্নিং স্কুলের নির্দেশিকা পাঠায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। সন্ধ্যায় আবার বলা হচ্ছে, পর্ষদের লিখিত অনুমতি ছাড়া কোনও প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ মর্নিং স্কুলের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। সরকারে দু'টি বিভাগে দু’রকম নোটিস হবে কেন? তাছাড়া সব জায়গার তাপমাত্রা সমান নয়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের হাতেই মর্নিং স্কুলের সিদ্ধান্ত ছেড়ে দেওয়া উচিত।’