এই সময়, কালনা: পরিবারের আর্থিক অনটন দেখে মা-বাবাকে কিশোর নিজেই জানিয়েছিল, রাজ্যের বাইরে কাজ করতে যেতে তৈরি সে। সেই মতো অন্য গ্রামের বাসিন্দা গুজরাটের রাজকোটে সিটি গোল্ডের দোকান থাকা এক ব্যক্তি জানিয়েছিলেন, তাঁর দোকানেই কাজ করবে ওই কিশোর।
তার যত্ন নেবেন নিজের সন্তানের মতোই। তখন কে জানতেন, সেই ভরসার পরিণতি কী ভয়াবহ হতে চলেছে! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য থেকে কোনওক্রমে প্রাণে বেঁচে ফিরেছে ১২ বছরের কিশোর।
রাজকোট থেকে দু’বছর পরে সেই কিশোর যখন ফিরল বাড়িতে, তখন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তাঁরা। কী অবস্থা হয়েছে ছেলের! দোকানের মালিকের নিয়মিত পাশবিক অত্যাচারের শিকার হয়েছে সেই কিশোর।
গোটা শরীর জুড়ে অজস্র ক্ষতচিহ্ন। কোথাও আবার সেই ক্ষত এখনও শুকোয়নি। অসহায় কিশোরকে দেখে আতঙ্কে শিউরে উঠেছেন প্রতিবেশীরাও। এ ভাবেও কি কোনও অসহায় কিশোরের উপরে এমন জান্তব অত্যাচার করা সম্ভব?
কালনার উপলতি গ্রামের বাসিন্দা, ১২ বছরের সেই কিশোরকে ভর্তি করা হয়েছে কালনা মহকুমা হাসপাতালে। সোমবার ওই কিশোরের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছে কালনার বুলবুলিতলা ফাঁড়ির পুলিশও। কিশোরের বাবা জানিয়েছেন, ছেলের এমন হাল যিনি করেছেন, তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
ওই কিশোরের বাবা বিষ্ণু দুর্লভ বলছিলেন, ‘খেতমজুরের কাজ করি। স্ত্রী আর চার সন্তান রয়েছে। কোনওমতে চলে সংসার। সংসারের এই দশা দেখে মেজো ছেলে নিজেই বাইরে কাজ করতে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল।
কালনার শিকারপুরের বাসিন্দা পরিচিত একজনের গুজরাটে সিটিগোল্ডের দোকান রয়েছে। তিনিই জানান, ছেলেকে সেখানে নিয়ে যাবেন। নিজের সন্তানের মতো যত্নে রেখে তাকে কাজ দেবেন। সেই ভরসাতেই ছেলেকে এত দূরে পাঠিয়েছিলাম।’
বিষ্ণু জানাচ্ছেন, মাঝেমধ্যে ফোনে ছেলের সঙ্গে কথা হতো। হঠাৎ করেই গত রবিবার রাজকোটে কর্মরত আর এক যুবক এসে সেই কিশোরকে বাড়িতে রেখে দিয়ে যান। ছেলের দশা দেখে আতঙ্কে আঁতকে ওঠেন বাবা। ঠিক মতো হাঁটতে পারছে না বছর ১২–র কিশোর।
শরীর জুড়ে, এমনকী গলাতেও রয়েছে ক্ষতচিহ্ন। ছেলের থেকেই জানতে পারেন, কখনও রড দিয়ে, কোনও সময়ে আবার গলাও টিপে ধরত দোকানের সেই মালিক। সঙ্গে ছিল নিয়মিত অকথ্য অত্যাচার।
কিশোরের মা পূর্ণিমা দুর্লভ বলছেন, ‘ছেলে ফোনেও ভয়ের কারণে ঠিক মতো কথা বলতে পারত না। সেই সময়ে নাকি মালিক সামনে দাঁড়িয়ে থাকত। তাই আমরাও কিছু জানতে পারিনি।’
যোগ করলেন, ‘মাসে ৩৫০০ টাকা করে মাইনে দেবে বলেছিল, কিন্তু একটি টাকাও দেয়নি। ছেলের অবস্থা খারাপ দেখে ওখানে কাজ করা আর এক যুবকের সঙ্গে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে।’
হাসপাতালে চিকিৎসা চললেও সেই কিশোর এখনও স্বাভাবিক হতে পারেনি। গলায় ব্যথার জন্য ঠিক মতো খেতেও পারছে না। ওই কিশোর বলছিল, ‘পরিবারের কষ্ট দেখে কাজ করতে গিয়েছিলাম। ওখানে যে খাবার দিত তা খেতে পারতাম না, তাই রড দিয়ে আঘাত করত। গলা টিপেও ধরত। বাড়িতে জানালে বলেছিল প্রাণে মেরে ফেলব। তাই কাউকে কিছু বলতে পারিনি।’