সুমন ঘোষ, খড়্গপুর
কথায় আছে, বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী। কিন্তু এই বাণিজ্যের জেরে ‘নাকের-জলে, চোখের জলে’ দশা খড়্গপুরের বাসিন্দাদের। একেবারে শহরের মাঝখানে রয়েছে পেঁয়াজের পাইকারি বাজার। প্রতিদিন ট্রাকের পর ট্রাক ঢুকছে এই বাজারে। তার জেরে যানজটে নাকাল হতে হচ্ছে খড়্গপুরের গোলবাজার সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের।
জানা গিয়েছে, দিনে প্রায় ৯০০ টন পেঁয়াজের লেনদেন হয় এই পাইকারি বাজারে। খড়্গপুর পট্যাটো-অনিয়ন মার্চেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, এটিই রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ বাজার।
প্রায় ৬০ জন পাইকার ব্যবসায়ী এখানে পেঁয়াজের কারবার করেন। অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক জাভেদ আহমেদ খান বলেন, ‘দিনে এক কোটি টাকার বেশি ব্যবসা হয় ঠিকই, কিন্তু বাজারের পরিসর এতটাই সংকীর্ণ যে লোডিং-আনলোডিংয়ে খুব সমস্যা হয়।’
তাঁর সংযোজন, ‘আমরা শহরের ঘিঞ্জি এলাকা থেকে বেরিয়ে অন্যত্র যাওয়ার জন্য সেই ২০১২ সাল থেকে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছি। কিন্তু নতুন বাজার তৈরির ব্যাপারে প্রশাসন উদ্যোগী হচ্ছে না।’
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাজকুমার সাউ, সহ-সভাপতি রাহুল কোচার, ব্যবসায়ী শেখ সাহনাওয়াররা জানিয়েছেন, ১৯৭০ সালে খড়্গপুরে পেঁয়াজ বাজারটি চালু হয়েছিল রেলের জমিতে। তখন ঝুড়িতে পেঁয়াজ আসত।
যত দিন গিয়েছে খড়্গপুর শহরের জনসংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে গাড়ির সংখ্যা, ব্যবসার পরিধি। শহরের মাঝে এই পাইকারি ব্যবসা করা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। একই সমস্যা এলাকার বাসিন্দাদেরও।
পাইকারি বাজারে সকাল-সন্ধে ট্রাক ঢুকতে থাকে। তার জেরে স্থানীয় বাসিন্দাদের গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করতে সমস্যা হয়। বিশেষ করে স্কুল, কলেজে যাতায়াত, অসুস্থ রোগীদের নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয়।
বাজার কমিটি জানিয়েছে, রেলের জমিতে রয়েছে রয়েছে বাজারটি। তার জন্য আলাদা করে ভাড়াও গুনতে হয়। অথচ রেলের পক্ষ থেকে সব দোকানে বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
তাঁদের আরও অভিযোগ, ‘বাজারে এত লোকের আনাগানো, অথচ কোথাও কোনও শৌচালয় নেই। রাস্তার অবস্থাও খুবই খারাপ। বর্ষার সময়ে চলা-ফেরা কঠিন হয়ে পড়ে।’
ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতি রাজকুমার সাউ বলেন, ‘পেঁয়াজের ব্যবসা করতে হলে পেঁয়াজকে বাতাস খাইয়ে রাখতে হয়। না-হলে পেঁয়াজ পচে পচে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু রেলের জমিতে এই বাজারে ব্যবসা বাড়ানোর জন্য সে সব ব্যবস্থা করার উপায় নেই।’
জাভেদ আহমেদ বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে সাহায্য চেয়েছি শুধু জমির জন্য। ১০ একর জমি চেয়েছি। সে জমি আমরা বর্তমান মূল্য দিয়ে কিনে নেব। নিজেরাই পরিকাঠামো তৈরি করব। সরকারকে কর দেবো। তবু সরকার জমি দিয়ে সাহায্য করছে না। এটাও বলে রাখি, আমরা অন্যত্র পেঁয়াজ মার্কেট তৈরি করতে পারলে ব্যবসা বৃদ্ধির পাশাপাশি দু’ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হবে।’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন দ্প্তরে একাধিক চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রথমে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জমির জন্য তিনটি এলাকার কথা জানানো হয়। একটি খড়্গপুর শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে বিদ্যাসাগর শিল্পতালুক, আর একটি ৭ কিলোমিটার দূরে ঘোলাগেড়ি।
অন্যটি ৯ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রপুর মৌজায়। ব্যবসায়ীরা বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকের জমি পছন্দ বলে জানান। সেই মতো ওয়েস্ট বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনে লিখিত আবেদন জানানো হয়। সে ব্যাপারে কর্পোরেশন উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ।
পরে জেলা প্রশাসন খড়্গপুর গ্রামীণ এলাকার সতকুইয়ে একটি জমি দেখে। জাভেদ আহমেদ খান বলেন, ‘সতকুইয়ে হলেও আমাদের সমস্যা নেই। কিন্তু সেখানকার জমি ছোট। আমাদের ন্যূনতম ১০ একর জমি ছাড়া ব্যবসা চলবে না।’
খড়্গপুরের মহকুমাশাসক পাতিল যোগেশ অশোকরাও বলেন, ‘মার্কেট সরানোর জন্য ব্যবসায়ীরা আমার কাছেও এসেছিলেন। তার জন্য জমির প্রয়োজন। জমি খোঁজার চেষ্টা হচ্ছে।’ কিন্তু এক সময়ে বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকে জমি দেওয়ার কথা ছিল। তার কী হলো?
মহকুমাশাসক বলেন, ‘এটা তো ফুড কমোডিটি। জানি না, শিল্পতালুক এ জন্য জমি দেবে কি না। তবুও একবার কথা বলব।’ ব্যবসায়ীদের দাবি, ‘শিল্পতালুকে জমি দিলে সমস্যার কিছু তো নেই। আমাদের তো প্রোডাকশন ইউনিট নয়। পণ্য আসবে আবার বেরিয়ে যাবে।’