এই সময়, বোলপুর: অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্টর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের পরে ৯৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারকে ফোন করে অশ্রাব্য গালিগালাজ এবং তাঁর মা-স্ত্রীর নাম করে হুমকি দেওয়ার মামলায় কেষ্টকে দু’বার নোটিস পাঠিয়েছে পুলিশ।
‘অসুস্থতা’র যুক্তিতে মঙ্গলবার পর্যন্ত হাজিরা দেননি অনুব্রত। বাজেয়াপ্ত হয়নি তাঁর মোবাইলটিও। নতুন করে কেষ্টকে নোটিস পাঠানো হবে কি না, তা-ও পুলিশের তরফে স্পষ্ট করা হয়নি। তবে অভিযোগকারী পুলিশ অফিসারের মোবাইলটি তদন্তের স্বার্থে ‘সিজ়’ করেছে পুলিশ।
যে ওসিকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে অনুব্রতর বিরুদ্ধে, ঘটনাচক্রে সেই লিটন হালদারের বিরুদ্ধে মাস ছয়েক আগেই বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বীরভূমের তৎকালীন পুলিশ সুপার।
জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, বালি মাফিয়াদের একাংশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে বিভাগীয় তদন্ত করে রিপোর্টও জমা পড়েছিল। তারপরে তাঁর বদলির সম্ভাবনা তৈরি হলেও এখনও তিনি বোলপুর থানার দায়িত্বেই রয়েছেন।
যে মেডিক্যাল সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে কেষ্ট ‘অসুস্থ’ বলে তদন্তকারী অফিসারকে জানানো হয়েছে, সেই সার্টিফিকেটের বৈধতা নিয়েই ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। সংশয় তৈরি হয়েছে ওই সার্টিফিকেট যিনি দিয়েছিলেন, সেই জনৈক ‘এইচ চৌধুরী’কে নিয়েও।
তবে এই বিষয়ে তদন্ত কোন পর্যায়ে, তা নিয়ে এ দিনও কোনও মন্তব্য করা হয়নি জেলা পুলিশের তরফ থেকে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ওই মেডিক্যাল সার্টিফিকেটটি দেওয়া হয়েছিল ‘শান্তিনিকেতন মেডিক্যাল কলেজ’-এর প্যাডে এবং যে রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি ব্যবহার করা হয়েছিল, সেটি জনৈক হিটলার চৌধুরী নামে এক চিকিৎসকের।
বোলপুরের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ) পদেও রয়েছেন হিটলার চৌধুরী নামে একজন চিকিৎসক। মেডিক্যাল সার্টিফিকেট তিনিই ইস্যু করেছিলেন কি না, করে থাকলে একজন সরকারি চিকিৎসক কী ভাবে একটি প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজের হয়ে সেটা ইস্যু করলেন, তা নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তরফ থেকেও কোনও তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়নি।
রামপুরহাটের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শোভন দে এ দিন বলেন, ‘আমি কোনও অভিযোগ পাইনি। উপরের কোনও নির্দেশও পাইনি। তাই এখনই এ নিয়ে আর কোনও মন্তব্য করছি না।’
পুলিশ সূত্রের খবর, যে হেতু অডিয়ো ক্লিপে (যার সত্যতা যাচাই করেনি ‘এই সময়’) আইসি লিটন হালদারের সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডল পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তির কথোপকথন হয়েছে, সে ক্ষেত্রে ওই ক্লিপ দু’জনের বাইরে কী ভাবে এল, সেটাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
এই ঘটনার পরে ক্ষমাপ্রার্থনা করে অনুব্রত যে বিবৃতি দেন, সেখানেও অডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পিছনে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। সেই সূত্রেই আইসির মোবাইলটি ‘সিজ়’ করা হয়েছে। বীরভূম জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ সিং বলেন, ‘সব ক’টি বিষয় নিয়েই তদন্ত শুরু হয়েছে। এখনই এর বেশি কিছু বলব না।’
কিন্তু অনুব্রতর মোবাইল সিজ় হয়েছে কি না অথবা হলে কবে হবে, সে প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি। কেষ্ট নিজে এ দিন মুখ খোলেননি। এই মামলায় আগাম জামিনের জন্যও এখনও আবেদন করেননি তিনি। তবে বীরভূম জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘অনুব্রত মণ্ডল অসুস্থ। তাই বাড়িতে বিশ্রামে আছেন। ফোন সিজ় করার খবর নেই।’