অর্ণব আইচ: দিল্লি ও রাজস্থানে বসে এই রাজ্যে নাশকতার ছক ‘আরসা’র। পাক চর সংস্থা আইএসআইয়ের মদতে ‘আরাকান জঙ্গি’দের এই ছক বানচাল করলেন গোয়েন্দারা। মূলত দিল্লি, রাজস্থান ও জম্মুর রোহিঙ্গাদের ওই জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা মগজধোলাই করছে বলে অভিযোগ। সম্প্রতি উত্তর ভারতে গোয়েন্দারা এরকমই অন্তত ২০ জন রোহিঙ্গার সন্ধান পেয়েছেন। আর তাদের একটি অংশকে জেরা করে উত্তরবঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তে গা ঢাকা দিয়ে থাকা আরও দুই রোহিঙ্গার সন্ধান পান গোয়েন্দারা। তাদের সাহায্যে নাশকতার ছক কষা হচ্ছিল কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে। তবে গোয়েন্দাদের কাছে খবর, আরাকান জঙ্গি সংগঠন ‘আরসা’র সদস্যরা উত্তর ভারত ও জম্মু-কাশ্মীরের কয়েকটি জায়গায় গা ঢাকা দিয়ে মগজধোলাই ও তার সঙ্গে নাশকতার ছকও কষে চলেছে। ওই রাজ্যগুলিতে ‘আরসা’ স্লিপার সেল তৈরি করেছে বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকে রাজ্যের গোয়েন্দাদেরও সতর্ক করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার আরাকানের জঙ্গি সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ বা আরসাকে মদত জোগাচ্ছে পাক চর সংস্থা আইএসআই। গত বছর থেকেই মায়ানমার তথা আরাকানের জঙ্গি সংগঠন আরসা শুরু করে তাদের কার্যকলাপ। এই জঙ্গি সংগঠনের মূল সদস্যরা রোহিঙ্গা। হায়দরাবাদ, দিল্লি, রাজস্থান, জম্মু-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় রোহিঙ্গাদের বসবাস হলেও মূলত দিল্লি, রাজস্থান ও জম্মুর রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে ‘আরসা’র সদস্য ও নেতারা। তাদের একটি অংশ মায়ানমার সীমান্ত ও অন্য অংশটি বাংলাদেশ সীমান্ত চোরাপথে পার করে এই রাজ্য ও উত্তর-পূর্ব ভারতে আসে। কাজের খোঁজে এই দেশে আসার নাম করে তারা আশ্রয় নেয় মূলত উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে।
আরসার শীর্ষ জঙ্গিনেতা আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি নিজে রোহিঙ্গা হলেও তার জন্ম পাকিস্তানের করাচিতে। সে বড় হয়েছে মধ্য প্রাচ্যে। মায়ানমারের রাখাইনে তৈরি করে জঙ্গি সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি। গত বছর থেকে আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি নিজেও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় গা ঢাকা দিয়ে জঙ্গি কার্যকলাপ শুরু করে। তার সঙ্গে যোগাযোগ হয় আইএসআই-এর কর্তাদের। পাক চর সংস্থা আতাউল্লাহর সংস্থা ‘আরসা’কে মদত দেয় এই দেশে নাশকতা করানোর। ‘অচেনা মুখ’ রোহিঙ্গাদের দিয়ে নাশকতা করানো হলে তাদের ধরা মুশকিল হতে পারে। সেই ছক কষা হয়। এর আগেও বুদ্ধগয়ায় নাশকতায় রোহিঙ্গাদের কাজে লাগিয়েছিল জঙ্গিরা। তাই আতাউল্লাহের নির্দেশে ‘আরসা’র জঙ্গিরা চোরাপথে জম্মু, কাশ্মীর, দিল্লি, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশের কয়েকটি জায়গায় ঘাঁটি তৈরি করে ওই রাজ্যের বাসিন্দা রোহিঙ্গাদের মগজধোলাইয়ের কাজ শুরু করে। তাদের সাহায্যেই শুরু হয় স্লিপার সেল তৈরির কাজ।
গত মার্চের মাঝামাঝি পাঁচ সঙ্গী-সহ বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ থেকে র্যাবের হাতে ধরা পড়ে আতাউল্লাহ। তাদের ডেরা থেকে প্রচুর ডলার, বাংলাদেশি টাকা ও বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার হয়। তাকে জেরা করে র্যাব জানতে পারে যে, আইএসআইয়ের নির্দেশে এই দেশের বিভিন্ন জায়গায় রোহিঙ্গাদের দিয়ে নাশকতার ছক কষা হচ্ছে। উত্তর ভারতে বসে এই রাজ্য-সহ পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে চলছে নাশকতার ছক। ওই তথ্য গোয়েন্দাদের হাতে আসার পরই গোয়েন্দা টিম রাজস্থান, দিল্লি, জম্মুতে অভিযান চালিয়ে অন্তত ২০ জন রোহিঙ্গাকে চিহ্নিত করে, যাদের মগজধোলাই করা হয়েছে। তাদের জেরা করেই উত্তরবঙ্গের হিলি সীমান্ত-সহ কয়েকটি জায়গায় আরও দু’জনকে আটক করে জেরা করা হয়। এই রোহিঙ্গাদের জেরা করে আরাকান জঙ্গি সংগঠন ‘আরসা’র মাথাদের সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।