• এক গাছে ১০০ প্রজাতির আম! তাক লাগালেন খেজুরির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ
    প্রতিদিন | ০৪ জুন ২০২৫
  • রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: একটি গাছে ১০০ প্রজাতির আম! নজির গড়লেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার খেজুরি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. অসীমকুমার মান্না। খেজুরির কুঞ্জপুর গ্রামের বাড়ি লাগোয়া তিন বিঘা জমিতে প্রায় ৫০০ দেশ-বিদেশের নানান প্রজাতির আমের বাগান তৈরি করেছেন তিনি। আর সেই বাগানে বিশেষ আম গাছ রয়েছে প্রায় ১৫টি। তারমধ্যে একটি গাছেই এবার ১০০ প্রজাতির আম ফলিয়েছেন। পাশাপাশি কোনও গাছে ৩০ প্রজাতির, কোনওটাতে ৮৫ প্রজাতির আম ফলিয়েছেন। লক্ষ্য এবার ১০০ প্রজাতির ফলন হওয়া গাছে ৩০০প্রজাতির আম ফলাবেন।

    দুই বছর আগে খেজুরি কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন তিনি। তারপর থেকেই অধিকাংশ সময় কাটে এই আম বাগানে। ছোট ছেলে ডাঃ অর্পণ মান্না এমবিবিএস ডাক্তার। কিন্তু তাঁরও নেশা আম বাগানে দেশ-বিদেশের নানান আম ফলানো। আমের টানেই তিনি বিদেশ সফর করেন। যে দেশেই যান, সেখান থেকে আমের চারা নিয়ে এসে বাগানে লাগান। এখন অর্পণকে আম বিশেষজ্ঞ বললে খুব একটা ভুল বলা হবে না। কারণ, দেশ-বিদেশ থেকে আম বিশেষজ্ঞ হিসেবে এখন আমন্ত্রণ আসে অর্পণের কাছে। তবে একটি গাছে ১০০ প্রজাতির আম ফলানো কি আদতে সম্ভব? জানা গিয়েছে, আল্ট্রাহাইড্রেশন পদ্ধতিতে দেশীয় আম গাছে গ্রাফটিং করে (দেশীয় আমগাছ কোমর উচ্চতায় কেটে দেওয়ার পরে সেখান থেকে বেরোনো শাখা-প্রশাখার সঙ্গে দেশি এবং বিদেশি আম গাছের ডালের সংযোগ ঘটানো হয়) সম্ভব। 

    হিমসাগর, কাটিমন, ল্যাংড়া, মল্লিকা, আম্রপালি, ভাণ্ডরাজ, রিগমা,চৌষা, কালী, রসবাহার, বেগুনফুলি, ফজলি যেমন রয়েছে তেমন বিদেশী প্রজাতির উল্লেখযোগ্য যে আম চর্চায় থাকে সেই মিয়াজাকি,আপেল ম্যাংগো,বেনানা ম্যাংগো, চিয়াং মাই,রেড আইভরি, ন্যাম ডক মাই, পালমার, ব্যানানা কিং, থ্রি টেস্ট-সহ আরও বিভিন্ন আম রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের বিদেশি আমের গাছ রয়েছে নার্সারিতে। এমন এক আম রয়েছে যেটা বড় হলে ওজন ছাড়িয়ে যায় ১ থেকে ২ কেজিরও বেশি, আবার এমনও আম রয়েছে যা কলার থেকেও লম্বা, এছাড়াও থ্রি টেস্ট অর্থাৎ একটা আম থেকে তিন রকম স্বাদ পাওয়া যাবে সেরকম প্রজাতির আমও রয়েছে অসীমবাবুর বাগানে। তাঁর ছোট ছেলের উদ্যোগে শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, মালেশিয়া, আমেরিকা-সহ একাধিক দেশের আম গাছ লাগানো হয়েছে।

    শুধু তাই নয় আমের পাশাপাশি একাধিক ফলের ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। যা নজর কেড়েছে রাজ্যবাসীর। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. অসীমকুমার মান্না বলেন, “অবসর নেওয়ার পরে এই আম বাগানেই সময় কেটে যায়। বাগানে প্রায় ৫০০ প্রজাতির আম গাছ রয়েছে। ছোট ছেলে বিদেশ ঘুরে আমের চারা সংগ্রহ করে। সেগুলো লাগানো হয় বাগানে। এখন বিদেশি আমের চাহিদা রয়েছে। ফলে আমাদের দেশের পুরানো কিছু আম হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই আমরা মালদহ,মুর্শিদাবাদ-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আম সংগ্রহ করে বাগানে রাখার চেষ্টা করছি। তবে এই বাগানে একটি দেশিয় গাছে আল্ট্রাহাইড্রেশন পদ্ধতিতে ১০০ প্রজাতির আম ফলানো হয়েছে। আরও বেশি হত। কিন্তু কোনও কোনও আম একবছর অন্তর ফলন দেয়। তাই এবার অনেকগুলো প্রজাতির আম হয়নি। পাশাপাশি কোন গাছে ৩০,কোন গাছে ৪০ কোন গাছে আবার ৮৫ প্রজাতির আম ফলেছে। আমাদের লক্ষ্য একটি গাছে ৩০০ প্রজাতির আম ফলানো।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)