• কেষ্ট এখনও অধরা কেন, প্রশ্ন
    আনন্দবাজার | ০৪ জুন ২০২৫
  • ফোনে আইসি-কে কু-কথা এবং হুমকি দেওয়ায় অভিযুক্ত। তাঁর বিরুদ্ধে যে ক’টি ধারায় মামলা হয়েছে, সেগুলির মধ্যে দু’টি জামিন অযোগ্য। তার পরেও এবং দু’বার নোটিস পেয়েও মঙ্গলবার পর্যন্ত থানায় না যাওয়া তৃণমূল নেতা অনুব্রত (কেষ্ট) মণ্ডল তবে কেন এখনও অধরা, জানতে চেয়ে বীরভূমের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে মঙ্গলবার ফোন করেন এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। পরে, তা সমাজমাধ্যমেও ছড়ায়। কিন্তু সদুত্তর মেলেনি। বীরভূমের পুলিশ সুপার আমনদীপের শুধু দাবি, ‘‘যা হচ্ছে, নিয়ম মেনেই হচ্ছে৷’’

    অনুব্রতের মন্তব্য সমাজমাধ্যমে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে ছড়ালেও তা নিয়ে হইচই শুরু হয় গত শুক্রবার। সে দিন হুগলির পিপুলপাতিতে দুই কর্তব্যরত মহিলা কনস্টেবলকে বিজেপির মহিলা মোর্চার কর্মীরা সিঁদুর দেওয়ায় বিতর্ক হয়েছিল। ঘটনাচক্রে, সে মামলায় এ দিন থানায় হাজিরা দেন বিজেপির ছ’জন। তাঁদের বিরুদ্ধে কোন কোন ধারায় মামলা হয়েছে, তা লিখিত ভাবে জানানো হয়। তাঁদের আইনজীবী রাজীব ঘরামি জানান, আজ, বুধবার চুঁচুড়া আদালতে জামিনের আবেদন করা হবে। ঘটনায় অভিযুক্তদের অন্যতম, বিজেপির হুগলি সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক সুরেশ সাউয়ের অভিযোগ, ‘‘বিজেপিকরি বলে আমাদের ব্যাপারে অতিসক্রিয় পুলিশ।’’

    তা হলে অনুব্রতের বিষয়ে পুলিশ সক্রিয় নয় কেন শুধু বিরোধীরা নন, প্রশ্ন নাগরিক সমাজেরও। যেখানে অনুব্রতের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার যে-যে ধারায় মামলা করা হয়েছে, সেগুলির মধ্যে ৭৫ (যৌন হেনস্থা) ও ১৩২ (সরকারি কাজে বাধাদান) নম্বর ধারা জামিন-অযোগ্য। বিরোধীরা তো স্পষ্ট বলছেন, কেষ্টকে আদালতে গিয়ে আগাম জামিন নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

    পুলিশ সুপার অবশ্য বলেন, ‘‘যদি কোনও অভিযোগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাত বছরের সাজার সংস্থান থাকে, সে ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে প্রথমে হাজিরার নোটিস দেওয়াই নিয়ম। আইন মেনেই পদক্ষেপ করছি।’’ অনুব্রতের তরফে পুলিশকে পাঠানো ডাক্তারি শংসাপত্র রবিবার থেকে পাঁচ দিন, অর্থাৎ কাল, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ‘বেড রেস্ট’-এর কথা বলা রয়েছে। পুলিশ সুপার জানান, অসুস্থ থাকায় অনুব্রতকে আর হাজিরার নোটিস দেওয়া হয়নি। তৃতীয় নোটিস কবে দেওয়া হবে, তা নির্দিষ্ট সময়ে জানানো হবে।

    কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘সাত বছরের কম সাজার সংস্থান হলে, নোটিস দেওয়ার কথা বলা আছে। তবে পুলিশ যদি মনে করে, যে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা না হলে তিনি অভিযোগকারীকে প্রভাবিত করতে বা প্রমাণ লোপাট করতে পারেন, তা হলে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে গ্রেফতার করতে পারে। দ্বিতীয়ত, এক বার নোটিস দেওয়ার কথা বলা আছে। নোটিসে সাড়া না দিলে, পুলিশ উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে পারে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘সাধারণ মানুষ বা সরকার-শাসক দলের বিরোধীদের ক্ষেত্রে পুলিশের এই মনোভাব দেখা যায় না।’’

    শান্তিনিকেতন মেডিক্যাল কলেজ থেকে মেডিক্যাল শংসাপত্র পেয়েছেন অনুব্রত। শংসাপত্রে যে চিকিৎসকের সই রয়েছে, তিনি বীরভূমের একটি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রশাসনিক পদে কর্মরত। ওই চিকিৎসক নিয়মবিরুদ্ধ কাজ করেছেন বলে স্বাস্থ্য দফতরের একাংশের দাবি। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ স্বাস্থ্য দফতর বা পুলিশ করেনি। পুলিশ সুপার বলেন, “ওঁর মেডিক্যাল রিপোর্টের ব্যাপারে পুলিশ কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকেনি।’’ কেষ্ট-আইসি কথোপকথনের ‘অডিয়ো ক্লিপ’ ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে কি না, জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘এ সব তদন্তের অঙ্গ, এখনই বলা সম্ভব নয়।’’

    আর অনুব্রত এ দিনও বলেন, ‘‘দু-তিন দিন ধরে জ্বর, সঙ্গে কাশিও। জ্বর না কমলে, এক বার করোনা পরীক্ষা করাব ভাবছি।’’ সুস্থ হলেই তদন্তে সহযোগিতা করবেন বলেও তাঁর দাবি।

    এ দিকে, বোলপুর থানার আইসি-কে সমাজমাধ্যমে ভিডিয়ো করে হুমকি দেওয়া ও হেনস্থার অভিযোগে আজ, বুধবার সকাল ১০টায় সিউড়ি থানায় হাজিরার নোটিস দেওয়া হয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নিলম্বিত বীরভূম জেলা সভাপতি বিক্রমজিৎ সাউকে। পুলিশ সূত্রের দাবি, বিক্রমজিৎ হাজিরা না দিলে, নিয়ম মেনে পরবর্তী নোটিস দেওয়া হবে৷ তার পরে, নিয়ম মেনে পদক্ষেপ করা হবে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)