একজন চাকরিপ্রার্থী একই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এক পদের জন্য বয়সের ছাড় পাবেন। বাকি পদে পাবেন না! নিয়ম বদলে ইন্টারভিউয়ে নিয়ে আসা হয়েছে অভিজ্ঞতার জন্য বরাদ্দ নম্বরও। হাজারো আইনি কাঠখড় পুড়িয়ে নিয়োগ নিয়ে কয়েক লক্ষ চাকরিপ্রার্থী আশার আলো দেখলেও স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) নয়া বিধি এবং বিজ্ঞপ্তি ফের প্রশ্ন তুলে দিয়েছে তাঁদের মনে। অভিযোগ উঠছে, ‘বিশেষ কোনও কারণে’ বৈষম্য সৃষ্টি করতেই নয়া বিধি এবং সেই বিধির ভিত্তিতে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে এসএসসি। এই বিধি আইনি ভাবে বৈধ কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা। তা নিয়ে মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টে মামলাও দায়ের করেছেন এক দল চাকরিপ্রার্থী।
শুধু বিধি এবং বিজ্ঞপ্তি নিয়ে মামলা দায়ের নয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পালন করা হয়নি বলে এ দিন এসএসসি, শিক্ষা দফতর এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে আদালত অবমাননার নোটিসও পাঠিয়েছেন এক দল বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীর আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত। আরেক দল বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীর আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, ‘‘আমরাও অবমাননার নোটিস পাঠিয়েছি।’’ সুদীপ্ত জানান, আদালত ‘অবৈধ’ হিসেবে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের চাকরি বাতিল করে টাকা ফেরত নিতে বলেছিল। কিন্তু রাজ্য তা করেনি। আদালতের নির্দেশ না মেনে নিয়োগের বিধি এবং বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। সেই কারণেই এই নোটিস।
এ দিন মামলা দায়েরের পর ফিরদৌস জানান, অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত নন, এমন চাকরিপ্রার্থীদের বয়সের ছাড় দিতে বলেছিল
সুপ্রিম কোর্ট। সেই একজন প্রার্থী কী ভাবে এক পদের জন্য বয়সের ছাড় পাবেন এবং অন্য পদের জন্য পাবেন না, এটা কী ভাবে সম্ভব? ২০১৬ সালের নিয়োগ বাতিল করে
পুনরায় নিয়োগ প্রক্রিয়া করতে বলেছিল আদালত। তাই ২০২৫ সালে নতুন বিধি করে ২০১৬ সালের নিয়োগ হতে পারে না। চাকরিপ্রার্থীদের অনেকে বলছেন, অনেক চাকরিপ্রার্থী গ্রুপ-ডি পদ, গ্রুপ-সি পদ, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক পদে আবেদন করেছিলেন। এ বারও করবেন। বয়সের ছাড় না দিলে তাঁদের চাকরির সুযোগ কমে যাবে। একই ভাবে তাঁদের প্রশ্ন, হঠাৎ কেন শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার জন্য নম্বর দেওয়া হচ্ছে? আগের বছর তো ছিল না। এই নিয়ম হলে যাঁরা গত আট বছর ধরে বঞ্চিত রইলেন তাঁরা সেই নম্বর পাবেন না।
মুর্শিদাবাদের ডোমকলের বাসিন্দা এবং মাধ্যমিক শিক্ষক পদের বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী সেতাবউদ্দিন বলেন, ‘‘আমাদের দাবি, ২০১৬ নিয়মেই নতুন পরীক্ষা নিতে হবে। নতুন বিধিতে আরও দুর্নীতির সুযোগ আছে। গত বারের মতো ইন্টারভিউয়ে ১০ নম্বর রাখতে হবে।’’ একইসঙ্গে তাঁর দাবি, এ বারের নিয়োগ ২০১৬ সালের আবেদনকারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হোক। নতুন আবেদনকারীদের পৃথক পরীক্ষা হোক। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক পদের বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী মৌসুমী ঘোষ দাস বলেন,
‘‘গতবার ১০টি শূন্যপদের জন্য ১৪ জনকে ডাকা হয়েছিল। এবার নতুন নিয়মে তা বদলে ১০টি শূন্যপদের জন্য ১৬ জনকে ডাকা হবে। এটা কেন হবে?’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘দুর্নীতির জন্য চাকরি পাইনি। বঞ্চিত থেকে গিয়েছি। তাই শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা নেই। এ দিকে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার জন্য ১০ নম্বর রাখা হয়েছে। এই নম্বর তো আমরা পাব না। তা হলে ১০ নম্বর কম নিয়েই চাকরির দৌড়ে নামতে হবে। এ তো বৈষম্য!’’