এক পা, দুই পা করে গোটা গ্রাম ঘুরে ফেলবেন। মেঠো রাস্তা, খড়ের গাদা, সবুজ বন — সবই চোখে পড়বে। কিন্তু হাজার খুঁজলেও দোতলা একটি পাকা বাড়িও চোখে পড়বে না। এ রাজ্যের একমাত্র গ্রাম বাঁকুড়া জেলার বালিয়াড়া, যেখানে একটাও পাকা দোতলা বাড়ি নেই। দোতলা বাড়ি করার মতো গ্রামে কারও আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই, এমন নয়। রয়েছে অন্য কারণ।
গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, ‘গ্রামে কারও দোতলা বাড়ি হোক, চান না মা মনসা’। তাই কেউই সাহস পান না। মা মনসা এখানে বড় জাগ্রত। তাঁর নির্দেশ অমান্য করার ক্ষমতা কারও নেই। গ্রামের মানুষের অন্ধবিশ্বাস দূর করার চেষ্টায় প্রাক্তন শিক্ষক সত্যনারায়ণ পাল দোতলা পাকা বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু ওই কাজের মাঝেই তিনি দুর্ঘটনার শিকার হন ও দীর্ঘকাল রোগে ভুগে তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পর ওই সংস্কার আরও গেড়ে বসে।
ওই ঘটনার পর থেকেই গ্রামে কেউ দোতলা বাড়ি করার সাহস পান না। এখন কেউ কেউ শখ করে দোতলা সমান বাড়ি তুললেও উপরে ছাদ দেওয়ার দুঃসাহস দেখাননি। বাঁকুড়া শহর থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরের এই গ্রামে আজও কোনও দোতলা বাড়ি নেই। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই সংস্কার চলছে।
গ্রামবাসীদের তরফে বলা হয়েছে, মা মনসা এখানে বড় জাগ্রত। তাঁর নির্দেশ অমান্য করার ক্ষমতা কারও নেই। প্রতি বছর ৭ আশ্বিন মহাধূমধামে দেবীর পুজো হয়। যাঁদের আর্থিক সামর্থ্য আছে, তাঁরা শহরে গিয়ে দোতলা বাড়ি করছেন। তবুও এই গ্রামে দোতলা বাড়ি করার মতো সাহস দেখাতে পারেনি কেউই। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘অনেকেরই দোতলা বাড়ি তৈরির ক্ষমতা আছে। কিন্তু দেবীর নিষেধ থাকার জন্য কেউ করে না। কিছুদিন আগেই একজন করার কথা ভেবেছিলেন, তাঁর পা ভেঙে যায়।’
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক জয়দেব চন্দ্র জানান, এটা মানুষের ভুল ধারণা। একটি বা দু'টি ঘটনাকে জড়িয়ে কোনও ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয় না। এতে বিজ্ঞানের কোনও ব্যাখ্যা নেই। অমূলক ধারণা মানুষের মনে গেঁথে গিয়েছে। তা হলে কী উপায়? জয়দেব বলেন, ‘এই অন্ধ বিশ্বাস ভাঙতে অনেকদিন সময় লাগবে। স্থানীয় মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে। সাহস করে দোতলা বাড়ি করতে হবে।’ বিষয়টি নিয়ে ওন্দার বিডিও মহম্মদ মোশারফ হোসেনের যোগাযোগ করা হলে তিনি, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।