শংকরকুমার রায় ও সুরজিৎ দেব: মোবাইল চুরির ‘অপবাদে’ কিশোরের উপর নির্যাতন। উলটো করে ঝুলিয়ে মার, শরীরে ইলেকট্রিক শক দেওয়ার অভিযোগ। দক্ষিণ কলকাতার সন্তোষপুরের এই ঘটনা জানাজানি হতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল গতকাল, মঙ্গলবার। ওই কিশোরের বাড়ি উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে। এবার ওই ঘটনায় দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলে প্রতিবাদে পথে নামলেন ওই কিশোরের পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়রা। এদিন সকালে ইসলামপুর রাজ্য সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়। রাস্তাতেই আগুন জ্বালিয়ে চলে প্রতিবাদ। এই ঘটনায় এখনও অবধি গ্রেপ্তার ২ জন। যদিও কারখানার মালিক মূল অভিযুক্ত শাহেনশা এখনও পলাতক।
জানা গিয়েছে, ইসলামপুরের ওই কিশোর দাদার সঙ্গে দেড় মাস আগে সন্তোষপুরের ওই জিন্স ওয়াশ কারখানায় কাজ করতে গিয়েছিল। নাবালককে কেন কাজে নেওয়া হয়েছিল, সেই প্রশ্নও উঠেছে। কারখানায় নারকীয় অত্যাচারের শিকার হয় ওই বছর ১৪-এর কিশোর। কারখানায় একটি মোবাইল ফোন চুরি গিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ফোন ওই কিশোর চুরি করেছে বলে অপবাদ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। আর তারই শাস্তিস্বরূপ কিশোরের উপর নারকীয় অত্যাচার চালানো হয়! ওই কিশোরের হাত-পা দড়ি দিয়ে বাঁধা হয় বলে অভিযোগ। তাঁকে উলটো করে ঝুলিয়ে এরপর ইলেকট্রিকের শক দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাতের দাগও হয়ে গিয়েছে বলে খবর। সেই ঘটনার ভিডিও করা হয়েছিল। সেই ভিডিওই ভাইরাল হয়। যদিও সেই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল।
ঘটনা জানার পর থেকেই ক্ষোভ বাড়ছিল ইসলামপুরে কিশোরের বাড়ির এলাকার বাসিন্দাদের। পরিবারের লোকজন গতকাল রাতেই স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। এদিন সকালে বিক্ষোভ আরও বাড়তে থাকে। রাজ্য সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়। কাঠ, টায়ার জ্বালিয়ে চলে বিক্ষোভ। ওই কিশোরের বাবা-মা, পরিবারের লোকজন রাস্তায় শুয়ে পড়েন। তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। ওই কিশোর এদিনও বাড়ি ফিরে আসেনি বলে খবর। অবিলম্বে তাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। সেই দাবিও উঠেছে। মিথ্যা অভিযোগে ছেলের উপর ওই ‘অত্যাচার’ হয়েছে বলে দাবি কিশোরের বাবা দিল মহম্মদের। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন ওই নাবালকের মা। বিক্ষোভের প্রায় ঘন্টাখানেক পর ইসলামপুর থানার পাটাগোড়া ফাঁড়ির পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। ইসলামপুর পুলিশ সুপার জবি থমাস বলেন, “ডায়মন্ড হারবার পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।” রবীন্দ্রনগর থানার পুলিশের একটি দল ইসলামপুর গিয়েছে।
এদিকে ওই ঘটনার পরই রবীন্দ্রনগর থানার পুলিশ তদন্তে নেমেছে। কারখানার মালিক শাহেনশার ভাইয়ের শ্যালক তৌহিদ আলম ও মালিকের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত মোস্তাফা কামালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতদের আজ আদালতে তোলা হবে। সোমবার থেকেই কারখানা বন্ধ করে পলাতক শাহেনশা। তাঁর খোঁজে জোর তল্লাশি চালানো হচ্ছে। ওই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেওয়া হচ্ছে।