নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদহ ও সংবাদদাতা, তপন: ইংলিশবাজারের সাদ্দাম নাদাবকে খুনের ঘটনায় নয়া মোড়। দু’দিন জেরার পর মূল অভিযুক্ত মৌমিতা হাসানের স্বামী রহমান নাদাবকে গ্রেপ্তার করল পুলিস।
সাদ্দামকে খুন করার জন্য মৌমিতাকে সহযোগিতা করেছিলেন স্কুল শিক্ষক স্বামী রহমান। বুধবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে একথা বলেন মালদহের পুলিস সুপার প্রদীপ কুমার যাদব।
তিনি জানান, ২০২২ সালে রহমানের বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন সাদ্দাম। সেখানে তাঁর একটা অফিস ছিল। ওই অফিসে মৌমিতাকে ক্লার্ক হিসেবে কাজও দিয়েছিলেন সাদ্দাম। সেসময় দুজনের মধ্যে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অবৈধ সম্পর্কের কথা জানতে পেরে গত জানুয়ারি থেকে সাদ্দামকে অফিস খালি করার জন্য বলেছিলেন রহমান। সেই অনুযায়ী এপ্রিলে সাদ্দাম অন্য জায়গায় অফিস নিয়ে যান। তারপর মৌমিতাকে ব্ল্যাকমেল করে সাদ্দাম টাকা চাইতেন বলে দাবি করেছেন রহমান। তদন্তে উঠে এসেছে, মৌমিতা ও রহমানের সম্পর্ক দীর্ঘদিন স্বাভাবিক ছিল না। একসময় তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদের কথাবার্তাও ওঠে বলে জানা গিয়েছে। মৌমিতার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে পরিবারে একাধিকবার সমস্যা হলেও স্বামী রহমান ‘মিটমাট’ করে সংসার টিকিয়ে রাখেন। শেষ পর্যন্ত সাদ্দামকে খুনের পরিকল্পনা করেন এই দম্পতি।
পুলিস সুপার আরও জানান, এরপর স্বামী-স্ত্রী মিলে সাদ্দামকে খুনের পরিকল্পনা করেন। ইংলিশবাজারে সাদ্দামকে মারলে জানাজানি হয়ে যেতে পারে। তাই পরিকল্পনা করে মালদহের বাইরে নিয়ে গিয়ে খুনের ছক কষেন মৌমিতা ও রহমান। সেই মতো স্বামী-স্ত্রী গত ১৬ মে দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনের সিহুরে মৌমিতার বাপের বাড়িতে চলে যান। সেখানে ১৮ মে তাঁরা সাদ্দামকে ডেকে পাঠান। তারপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে খুন করা হয় তাঁকে। পরদিন বাজার থেকে ইট, বালি, পাথর কিনে এনে গাঁথনি করে সাদ্দামের মৃতদেহ লুকিয়ে ফেলেন তাঁরা। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, মৌমিতা তাঁর বাপের বাড়ির কাছে এক আত্মীয়ের বাড়িতে সাদ্দামের স্কুটি রাখেন। সাদ্দামের শরীরে তিন জায়গায় আঘাত রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে। এই ঘটনায় এখনও খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার হয়নি।
মৃতদেহ উদ্ধারের দিন সাদ্দাম খুনের বিষয়টি জেনেছেন বললেও সন্দেহের ঊর্ধ্বে ছিলেন না রহমান। কারণ পুলিস জানতে পেরেছিল ঘটনার দিন তপনের সিহুর গ্রামে গিয়েছিলেন রহমান। ফলে সন্দেহ আরও জোরালো হয়। সেই ভিত্তিতেই বুধবার সারাদিন তপন চৌরঙ্গী এলাকা থেকে সিহুর গ্রাম পর্যন্ত তপন থানার সহযোগিতায় তদন্ত চালান ইংলিশবাজার থানার একাধিক অফিসার।
তদন্তকারীরা রহমানের উপস্থিতির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য এদিন বিভিন্ন জায়গায় তথ্য জোগার করার চেষ্টা করেন। তদন্তকারী দল এদিন চৌরঙ্গীর একাধিক দোকানে গিয়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে। কারণ তাঁরা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন, রহমান কি শুধু ঘটনার কথা জানতেন? নাকি সরাসরি তিনি খুনে অংশ নিয়েছেন? নিজস্ব চিত্র।