নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: একদিন বাদেই ফের ফুঁসছে তিস্তা। বুধবার সংশ্লিষ্ট নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সঙ্কেত জারি করেছে সেচদপ্তর। একই সঙ্গে তিস্তার ছোবলে ফের বিপন্ন সিকিম ও কালিম্পংয়ের লাইফ লাইন ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। সংশ্লিষ্ট রাস্তার তিনটি জায়গায় ফাটল ধরেছে। ফলে রাস্তা দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এদিকে, এক রাতে রেকর্ড বৃষ্টি কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলায়। যারজেরে সংশ্লিষ্ট দুই জেলায় বোরো ধান, রাস্তা, নদী বাঁধের ক্ষতির আশঙ্কা করছে প্রশাসন। আজ, বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারে যাচ্ছেন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। সোমবার রাতে তিস্তা নদীর জলস্তর কিছুটা নেমে যায়। যারজেরে ওই রাতেই মেখলিগঞ্জ থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত তিস্তা নদীর অসংরক্ষিত এলাকা থেকে প্রত্যাহার করা হয় হলুদ সঙ্কেত। মঙ্গলবার গভীর রাতে আবার সংশ্লিষ্ট নদীর জলস্তর বাড়ে। সেচদপ্তর সূত্রে খবর, পাহাড়ের উঁচু এলাকা থেকে জল নেমে আসায় নদীর জলস্তর বেড়েছে। মেখলিগঞ্জ থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত অসংরক্ষিত এলাকায় নদীর জলস্তর বিপদসীমার উপরে রয়েছে। সেজন্য সেখানে হলুদ সঙ্কেত জারি করা হয়েছে। এর বাইরে জলপাইগুড়ির ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের কাছে জলঢাকা, মাথাভাঙায় মানসাই এবং সংকোশ নদীর জলস্তর বাড়ছে। সেচদপ্তরের ইঞ্জিনিয়াররা বলেন, ভুটান ও সিকিম পাহাড়ে সংশ্লিষ্ট নদীগুলির উৎপত্তিস্থল। কাজেই পাহাড়ে বৃষ্টি হলেই নদীর জল বাড়ছে। এতে এখনও তেমন ক্ষতি হয়নি। গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে। এদিকে, কালিম্পংয়ের লাইফ লাইন ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের একাধিক জায়গায় থাবা বসিয়েছে তিস্তা। মঙ্গলবার রাত থেকে এদিন সকাল পর্যন্ত ২৬ মাইল, কিরনি ও মেলি এলাকায় রাস্তায় ফাটল ধরেছে। এরবাইরে তিস্তার জলস্তরের উচ্চতা লিকুভীরে জাতীয় সড়কের প্রায় কাছাকাছি। সমগ্র পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট রাস্তা দিয়ে যান চলাচল নিয়ে প্রশাসন বিধিনিষেধ জারি করেছে। কালিম্পংয়ের পুলিস সুপার শ্রীহরি পাণ্ডে বলেন, জাতীয় সড়ক দিয়ে কোনও ভারী যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। শুধুমাত্র ছোট গাড়ি চলাচল করছে। অন্যদিকে, আলিপুদুয়ার ও কোচবিহার জেলায় বৃষ্টির দাপট অব্যাহত। আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর, গত ২৪ ঘণ্টায় কোচবিহার ও আলিপুদুয়ারে বৃষ্টির পরিমাণ, যথাক্রমে ১৩৯ এবং ১১০.২০ মিলিমিটার, যা রেকর্ড। এর বাইরে মাথাভাঙায় ১০১, তুফানগঞ্জে ৯৬ এবং ময়নাগুড়িতে ৯০ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। এমন বৃষ্টির জেরে কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে বোরো ধান ও সব্জি চাষে ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে শিলিগুড়ি সহ সংশ্লিষ্ট দুই জেলায় রাস্তার ও নদী বাঁধের ক্ষতির আশঙ্কাও করা হচ্ছে। কোচবিহারে শালটিয়া নদী সংলগ্ন রাস্তা সামান্য ভেঙেছে। কোচবিহারের কৃষি আধিকারিক অসিতবরণ মণ্ডল বলেন, জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। আবহাওয়ার গতিবিধি দেখে চাষিদের ৮০ শতাংশ পরিপক্ক ধান কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আলিপুরদুয়ারের কৃষি আধিকারিকেরও একই বক্তব্য। এই অবস্থায় এদিন শিলিগুড়ির বালাসন ও মহানন্দা নদী সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেন সেচমন্ত্রী। চর দখল নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।