• ‘অপারেশন সিন্দুর’ শেষ করে বাড়ি ফিরলেন রানাঘাটবাসী কৃষ্ণকান্ত
    বর্তমান | ০৫ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: কার্গিল যুদ্ধের সময়ও ছিলেন ‘ফ্রন্ট লাইনে’। সাম্প্রতিক ‘অপারেশন সিন্দুরে’র সক্রিয় সদস্যও ছিলেন তিনি। আলফা কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে লাগাতার গুলিবর্ষণের মাঝেও সামলেছেন লাইন অব কন্ট্রোলের বর্ডার পোস্ট। এযাবৎ দেশের সবচেয়ে বড় সামরিক পদক্ষেপের প্রতিনিধিত্বের পর অবসর গ্রহণ করে বাড়ি ফিরলেন রানাঘাটের ভূমিপুত্র কৃষ্ণকান্ত হালদার। মঙ্গলবারের পড়ন্ত বিকেলে তিনি এসে পৌঁছলে জাতীয় পতাকা নিয়ে আমজনতা তাঁকে অভিবাদন জানায়। শোভাযাত্রা করে বাড়ির দুয়ার পর্যন্ত পৌঁছে দেয় বীর জওয়ানকে।

    রানাঘাট-২ব্লকের শ্যামনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃতিনগরের বাসিন্দা কৃষ্ণকান্ত হালদার। বাড়িতে স্ত্রী পিনুদেবী ছাড়াও রয়েছেন বিধবা বৃদ্ধা মা লীলাবতীদেবী। আর রয়েছে দুই ছেলে-মেয়ে। ১৯৮৩ সালে প্রথম সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফে যোগ দেন তিনি। কৃষ্ণনগরের সীমানগরে হয় প্রশিক্ষণ। এরপর দীর্ঘদিন সামলেছেন উত্তর-পূর্ব ভারতের নাগাল্যান্ড সীমান্তের দায়িত্ব। পরবর্তীতে রাজস্থান, গুজরাত হয়ে তাঁর পোস্টিং হয় কাশ্মীরে। ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের সময়ও নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর গুরুদায়িত্ব সামলেছেন। পরবর্তীতে পদোন্নতি হলে ইন্সপেক্টর র‌্যাঙ্কের কৃষ্ণকান্তবাবু দায়িত্ব পান কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে। সম্প্রতি পহেলগাঁওয়ে নিরীহ পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার পাল্টা ‘অপারেশন সিন্দুর’ শুরু করে ভারত। 

    কৃষ্ণকান্তবাবু জানিয়েছেন, সেই সময় তিনি আলফা কোম্পানির কমান্ডার। স্বাভাবিকভাবেই আর্মি নেভি এবং এয়ার ফোর্সের পাশাপাশি সক্রিয় ভূমিকা নিতে হয়েছে বিএসএফকেও। নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে গুলিবর্ষণের দ্বায়িত্ব আসে কৃষ্ণকান্তবাবু এবং তাঁর কোম্পানির কাঁধেও। সিন্দুরের সদস্য হিসেবে একটানা ৬৫ঘণ্টা লড়াই করেছেন। শুধু তাই নয়, কমান্ডার হিসেবে লাইন অব কন্ট্রোলে থাকা ১৩৬জন আধাসেনাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পাকিস্তানি পোস্ট সিলাম ও মিউহাট ধ্বংস করেছে কৃষ্ণকান্তবাবুর তত্ত্বাবধানে থাকা কোম্পানিই। অপারেশন শেষ হওয়ার পর নির্দিষ্ট বয়সেই তিনি অবসর গ্রহণ করেন। মঙ্গলবার বিকেলে ফেরেন রানাঘাটে। এদিন তাঁকে স্বাগত জানাতে স্টেশন চত্বরে শতাধিক মানুষের ভিড় করে। ফুলের মালা পরিয়ে অভিবাদন জানানো হয়। জাতীয় পতাকা নিয়ে শোভাযাত্রা করে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত ওই জওয়ানকে শ্যামনগরের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেয় রানাঘাটের মানুষ।

    কৃষ্ণকান্তবাবু বলেন, একটানা ৬৫ঘণ্টা লড়াই করতে হয়েছে। হামলা চলাকালীন বহু জঙ্গি অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল। আমরা তা রুখে দিতে পেরেছি। পাকিস্তানি রেঞ্জার্সের একাধিক পোস্ট ধ্বংস করেছি আমরা। আমাদের লাগাতার গুলিবর্ষণের সামনে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনা এবং রেঞ্জার্স নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে। নিজের গ্রামে ফিরে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে এই ভালোবাসা পেয়ে খুব ভালো লাগছে। আশা করছি, আমরা পহেলগাঁওয়ের ঘটনার প্রতিশোধ নিতে পেরেছি। বয়সের কারণে অবসর নিতে হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে দেশের প্রয়োজনে তিনি আবার সীমান্তে নিজের জীবন বাজি রেখে লড়াই করতে রাজি আছেন।
  • Link to this news (বর্তমান)