সোমেন পাল, গঙ্গারামপুর: দিন কি বদলাচ্ছে! দিনাজপুরের গমিরা মুখোশ নাচ এবার বলিউডে। রাজবংশী সমাজের ঐতিহ্যবাহী এই লোকসংস্কৃতি ও নাচ রূপোলি পর্দায় তুলে ধরায় খুশি কুশমণ্ডির গমিরা শিল্পীরা। বলিউডের মা, ভামিনী সিনেমার সৌজন্যে রাজ্য ছাড়িয়ে গোটা দেশে পরিচিতি পাচ্ছে দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী গমিরা মুখোশ নাচ। বলিউড অভিনেত্রী কাজল অভিনীত মা সিনেমায় গমিরা মুখোশ নাচের দৃশ্য রয়েছে। তা দেখা গিয়েছে সিনেমার ট্রেলারেও। উত্তরের দৃষ্টিনন্দন এই লোকসংস্কৃতি সিনেমার পর্দায় উঠে আসায় উজ্জীবিত শিল্পীরা।
কী এই গমিরা মুখোশ নাচ? মূলত, শক্তির আরাধনায় ঢাকের বাজনার তালে মুখোশ পরে হয় এই নাচ। কালী পুজোয় রাজবংশী সমাজে গমিরা মুখোশ নাচের রীতি রয়েছে। পুরুষ শিল্পীরাই এই নাচ করেন। দলে একজন তান্ত্রিক থাকেন। শক্তির আরাধনার উদ্দেশ্যে ডাকিনি, যোগিনী, বুড়া বা বুড়ি, চণ্ডী, কালীর মুখোশ পরে গমিরা নাচ হয়ে থাকে।
ভামিনী সিনেমায় এই নাচ ফুটিয়ে তুলতে দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের দাঁড়ালহাট এলাকায় শ্যুটিং করেন কুশমণ্ডির ১২ জন শিল্পী। গমিরা শিল্পী গৌরচন্দ্র সরকার বলেন, কুশমণ্ডির খন অ্যাকাডেমির মাধ্যমে বলিউডের সিনেমাতে গমিরা মুখোশ নাচ করার জন্য ডাক আসে। আমরা ১২ জন শিল্পী এই সিনেমায় নাচ করেছি।
গৌরচন্দ্রের সংযোজন, রাজবংশী সমাজের এই লোকসংস্কৃতি এখনও ধরে রেখেছি আমরা। এই নাচ সবাই পারে না। আমাদের একটি দল আছে। যে কেউ মুখোশ পরে গমিরা নাচ করতে পারে না। গ্রামে কালী, চণ্ডীপুজোতে আমাদের ডাক আসে এই নাচ করার জন্য। বদলে সামান্য পারিশ্রমিক মেলে। এই নাচ এবার বলিউডের সিনেমায় উঠে আসায় খুবই খুশি শিল্পীরা। তাঁদের কথায়, রাজ্য ছাড়িয়ে গোটা দেশ আমাদের গমিরা মুখোশ নাচ দেখছে। এটাই আমাদের বড় পাওনা।
কুশমণ্ডি খন অ্যাকাডেমির কর্ণধার সুদেব সরকার বলেন, আমাদের অ্যাকাডেমি থেকে শিল্পীরা গমিরা মুখোশ নাচ করেছেন বলিউড সিনেমাতে। রাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এত বড় প্রচার কোনওদিন পায়নি দিনাজপুরের গমিরা নাচ। আগামীতে কোনও পরিচালক ইচ্ছে প্রকাশ করলে গমিরার ইতিবৃত্ত নিয়ে কাজ করা যাবে।
সুদেব ২০২৪ সালে লন্ডনের কিংস ইউনিভার্সিটিতে খন ও গমিরার চিত্রনাট্য পরিবেশন করেছেন। সুযোগ এলে রাজবংশী সমাজের এই সংস্কৃতিকে আরও উচ্চমাত্রায় নিয়ে যেতে চান সুদেব সহ গমিরা শিল্পীরা। গমিরা নাচের দৃশ্য দেখা গিয়েছে মা সিনেমার ট্রেলারে।