• বহরমপুরের নার্সিংহোমে বিক্ষোভ, ভাঙচুর, ধৃত ২
    বর্তমান | ০৫ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: বহরমপুরের শিল্পতালুকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার রাতে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। তার রেস গড়াল বুধবার সাকলেও। দেহ আটকে রেখে মোটা টাকা আদায়ের চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ তোলে তুমুল বিক্ষোভ দেখায় মৃতের পরিবার। হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে আইসিইউ ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে বহরমপুর থানার পুলিস। দু’জনকে আটক করে পুলিস। পরে অভিযোগ পাওয়ার পর তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। পাসাপাশি, দেহ আটকে রেখে অতিরিক্ত বিল নেওয়ার অভিযোগ নিয়েও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিস সূত্রে খবর। 

    জানা গিয়েছে, ডোমকলের বাসিন্দা মহম্মদ হাফিজুদ্দিনন মণ্ডলকে (৭০) অত্যন্ত সঙ্কটজনক অবস্থায় সোমবার শিল্পতালুকের ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অভিযোগ, মঙ্গলবার সকালে ওই রোগীর মৃত্যু হলেও রাতে রোগীর পরিজনদের মৃত্যুর খবর জানানো হয়। দেহ আটকে রেখে ৫৫ হাজার টাকা বিল দাবি করা হয় বলে অভিযোগ। তারপর ক্ষোভে ফেটে পড়েন মৃতের পরিজনরা। হাসপাতালে রীতিমতো তাণ্ডব চালানো হয়। আইসিইউ থেকে শুরু করে রিসেপশন সর্বত্রই ভাঙচুর করা হয়। চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মী এবং নার্সদের হেনস্তা করা হয়। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে পুলিসকে খবর দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিশাল পুলিসবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বহরমপুর থানার এক আধিকারিক বলেন, চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের হেনস্তা এবং হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছি। মৃতের ছেলে আমিরুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, আমার বাবার শারীরিক সমস্যা থাকার কারণে আমরা সোমবার ওই হাসপাতালে ভর্তি করি। তখন বাবা সকলের সঙ্গে কথা বলছিল। রাতের দিকে খুব খারাপ অবস্থা বলে আইসিইউতে দিয়েছিল। তারপর আমাদের কাউকে দেখতে দেয়নি। সকালে রক্ত লাগবে বলে আমাদেরকে জানানো হয়। রক্ত আনার পরে বলছে রোগীর অবস্থা খুব খারাপ। এখন রক্ত দেওয়া যাবে না। আমরা বাবাকে অন্যত্র নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। তখন হাসপাতাল থেকে বলা হয়, রোগীর অবস্থা খুব খারাপ এখন ছাড়া যাবে না। আমাকে বারবার টাকা জমার জন্য জোর দেয়। আমি বললাম, সমস্ত বিল পাঠিয়ে দিলে টাকা মিটিয়ে রোগীকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাব। কিন্তু ওরা রোগীকে ছাড়তে চায়নি। তাঁর আরও অভিযোগ, বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বাবাকে নিয়ে টালবাহানা শুরু করে হাসপাতাল। রাতে চিকিৎসক আসার পর আমাদের জানানো হয় রোগীর অবস্থা ভালো নয়। আপনারা রোগীকে নিয়ে যান। ডাক্তারবাবু আমাদের জানিয়েছিলেন, আমি তো সকাল ১১ টায় রোগীকে ছেড়ে দিতে বলেছি। আমরা যখন বাবাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তোড়জোড় করছি, তখন জানানো হয়, মারা গিয়েছে। সকালে মারা যাওয়া পর সারাদিন আটকে রেখে রাতের বেলায় ৫৫ হাজার টাকা বিল চাইছে। হাসপাতালের ম্যানেজার দেবাশিষ চক্রবর্তী বলেন, বয়স্ক এক ক্যান্সার পেশেন্ট আমাদের কাছে ভর্তি হয় অত্যন্ত ক্রিটিকাল অবস্থায়। আমরা রোগীর পরিজনকে তখনই বলেছি, রোগীর অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক। রোগীকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলাম। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তারপর রোগী মারা যান। রোগীর মৃত্যুর পর রোগীর পরিজনেরা আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মচারী এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের গায়ে হাত তোলে। 
  • Link to this news (বর্তমান)