• মোটা অঙ্কের প্যাকেজ দিয়ে কাটা হতো কিডনি
    বর্তমান | ০৫ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: কলকাতা শহরতলির বেসরকারি হাসপাতালে প্যাকেজ সিস্টেমে অপারেশন করত বিহারের কিডনি গ্যাং। দাতা এবং গ্রহীতাকে ওইসব নার্সিংহোমে রেখে মোটা টাকার প্যাকেজে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা হয় অবৈধভাবে। ভগবানগোলার রৌশানের কিডনি নেওয়ার ক্ষেত্রেও নাগের বাজারের একটি নার্সিংহোমমে অপারেশন করা হয়েছিল বলেই জানতে পেরেছে পুলিস। ভুয়ো কাগজপত্র, এমনকী দাতার নকল পরিচয়পত্রও পেশ করা হচ্ছে ওইসব নার্সিংহোমে। ফলে পরবর্তীকালে তদন্তে মিলছে না কিডনি দাতাদের খোঁজ। ঠিক একই কায়দায় রৌশানের কিডনি কিনে নেওয়া হয়েছিল বলেই পুলিসকে জানিয়েছে সে। মাত্র পাঁচ লক্ষ টাকা তাকে দেওয়া হলেও গ্রহীতাদের কাছ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা নিয়ে নেওয়া হয়। নার্সিংহোমের মোটা অঙ্কের টাকার প্যাকেজ মিটিয়ে দেয় কিডনি গ্রহীতারা। গোটা অপারেশন প্রক্রিয়া যাতে গোপনে করা যায় তার সমস্ত বন্দোবস্ত করে বিহারি গ্যাং। এভাবেই অত্যন্ত গোপনে টাকার টোপ দিয়ে এই বাংলার তরতাজা যুবকদের কিডনি কিনে নিচ্ছে বিহারের গ্যাং। ‘অর্গান ডোনেশন’-এর নিয়ম না মেনে শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে হস্তান্তর হচ্ছে মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। পাঁচ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কিডনি নিয়ে, ২৫ লক্ষ টাকায় তা অবৈধভাবে গ্রহীতাকে পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। যা নিয়েই উদ্বেগ বাড়ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন প্রোফাইলে ঢুকে কিডনি গ্যাং টোপ দিচ্ছে। সেই টোপ গিললেই মুহূর্তের মধ্যে কিছু টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিডনি পাচার চক্র হাসপাতালের প্যাকেজে সব ব্যবস্থা করে ফেলে নিমেষে।  

    কিডনি দাতার ভুয়ো আধার কার্ড থেকে শুরু করে যাবতীয় ডকুমেন্ট তৈরি করে নার্সিংহোমে পেশ করা হয়। চিকিৎসকরা সেই কাগজে কোনও খুঁত না থাকায় নির্দিষ্ট দিনক্ষণ দেখে অপারেশন করেন।  কলকাতার শহরতলির বিভিন্ন নার্সিংহোমে ভিন রাজ্যের এত রোগী ভর্তি হয় যে চিকিৎসকদের অন্য রাজ্যের রোগীর কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করতেও কোনও সন্দেহ হয় না। একই কায়দায় ভগবানগোলার রৌশানের কিডনি কেটে বের করা হয় এবং তা বসানো হয় মুম্বইয়ের এক ব্যক্তির দেহে। পুলিসি জিজ্ঞাসাবাদে রৌশান জানিয়েছে, প্রথমে তাকে বিহারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেখানে বহু আধার কার্ড তৈরি করে নকল বাবা-মা সাজিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করানো হয়। সে স্বেচ্ছায় কিডনি দান করছে এমন বয়ান দেওয়ার পর তাকে কলকাতার সেই নার্সিংহোমে এনে ভর্তি করা হয়। অপারেশনের দু’ দিন আগে নার্সিংহোমে রেখে তার বিভিন্ন টেস্ট করার পরেই কিডনি কেটে বের করা হয়। 

    একই সময়ে পাশের কেবিনে ভর্তি করা হয় মুম্বইয়ের ওই কিডনি গ্রহীতাকে। সফলভাবে তার দেহে প্রতিস্থাপন করা হয় রৌশানের কিডনি। বহরমপুর থানার এক তদন্তকারী পুলিস আধিকারিক বলেন, ধৃতকে আর্থিক প্রতারণা মামলায় হেফাজতে নিয়ে আমরা কিডনি পাচার চক্রের যা তথ্য পেয়েছি তা ভয়ঙ্কর। অভিযুক্ত যে দাবি করছে এবং তার কাছে যা প্রমাণ আছে তাতে এই কিডনি গ্যাং খুব সন্তর্পণে এই কাজ করছে। এমন ভাবে গোটা প্রক্রিয়াটা সাজানো হচ্ছে তাতে সহজে তাদের নাগাল পাওয়া দুষ্কর। 
  • Link to this news (বর্তমান)