• মেমারি বিস্ফোরণ কাণ্ডের তদন্তে চাঞ্চল্যকর মোড়, সিলিন্ডার পাচারে বড় র‌্যাকেটের হদিশ, অন্যতম মাথা ‘গ্যাস কালু’
    বর্তমান | ০৫ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: সাতগাছিয়া এলাকায় সে ‘গ্যাস কালু’ নামে পরিচিত। কালনা, মেমারি বা বর্ধমানের কোনও হোটেল বা রেস্তরাঁয় গ্যাস সিলিন্ডার দরকার হলেই কালু ত্রাতা হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে রেস্তরাঁয় গ্যাস সিলিন্ডার পৌঁছে দেয়। সাতগাছিয়ার কারকাণ্ডা গ্রামে সে অবৈধভাবে তৈরি করেছিল গোডাউন। সেখানেই প্রায় ৪০০টি সিলিন্ডার মজুত করে রেখেছিল। রাস্তার পাশে সে ১৫বছর ধরে অবৈধ কারবার চালিয়ে আসছে। সবাই তা দেখেছে। কিন্তু, কেউ মুখ খুলতে পারত না। কারণ, একবার কালুকে পুলিস গ্রেপ্তার করে। কয়েকদিন জেল খাটার পর জামিনে বেরিয়ে আসার পর তার তেজ আরও বেড়ে যায়। গোডাউনে সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়। মাসিক আয়ও বেড়ে যায়। অবৈধভাবে সিলিন্ডার বিক্রি করে মাসে প্রায় ১০লক্ষ টাকা আয় হতো। সেই টাকা কিছুটা ছড়িয়ে দিয়ে সে নিশ্চিন্তে কারবার চালাত।

    বৈধ জায়গা থেকে না কিনে, কালুর কাছ থেকে সিলিন্ডার নিত কেন? এই প্রশ্নের জবাবে এক পুলিস কর্তা অঙ্ক কষে হিসেব বোঝান। তিনি বলেন, বৈধ গোডাউনগুলিতে সিলিন্ডারের হিসেব থাকে। অডিট হয়। একটা সিলিন্ডার এদিক সেদিক হলে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। কালুর ক্ষেত্রে সেসব ঝক্কি ছিল না। সে কয়েক হাজার সিলিন্ডার অবৈধভাবে মজুত করলেও তা দেখার কেউ ছিল না। কালু গ্যাস ডিলারদের থেকে অনেক কম দামে সিলিন্ডার পৌঁছে দিত। সে বাড়িতে ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ হওয়া সিলিন্ডারগুলি থেকে গ্যাস বের করত। তারপর তা কমার্শিয়াল সিলিন্ডারে ভরে বিক্রি করত। ডিলারদের কাছে কমার্শিয়াল সিলিন্ডার কিনতে গেলে নির্দিষ্ট দাম দিতে হয়। তাছাড়া, তৎক্ষণাৎ তা পাওয়া যায় না। কালু তাদের কাছে অনেক কম দামে কমার্শিয়াল সিলিন্ডার বিক্রি করত। সেই কারণে তার ব্যবসা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

    স্থানীয়দের দাবি, গ্যাস ডেলিভারি সংস্থাগুলির নজরদারি থাকলে এই অবস্থা হতো না। পুলিসেরও নজরদারির অভাব ছিল। অতিরিক্ত পুলিস সুপার অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বেশকিছু সিলিন্ডার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেগুলি সে কোথা থেকে নিয়ে আসত, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। 

    পুলিস সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, কয়েকদিন আগে কালুর গোডাউনে বিস্ফোরণ হয়। পরপর সিলিন্ডার ফাটতে শুরু করায় এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়। পুলিস ও দমকল কর্মীদের কিছুক্ষণের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। অবৈধ গোডাউন থেকে ৩০০টিরও বেশি সিলিন্ডার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল, যে সিলিন্ডার কয়েকশো মিটার দূরে ছিটকে যায়। ওই ঘটনায় কয়েকজন জখম হন বলে স্থানীয়দের দাবি। তাঁদের তড়িঘড়ি সেখান থেকে সরানো হয়।
  • Link to this news (বর্তমান)