রঘুনাথপুরে বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্কের জেরেই খুন মহিলা, ১৭ দিন পর গুজরাত থেকে গ্রেপ্তার মুর্শিদাবাদের যুবক
বর্তমান | ০৫ জুন ২০২৫
সংবাদদাতা, রঘুনাথপুর: রঘুনাথপুর শহরের ভাড়াটিয়া মহিলা খুনের কিনারা করল পুলিস। পরকীয়ার কারণেই এই খুন বলে পুলিসের অনুমান। গত ১৮ মে রঘুনাথপুর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের একটি ভাড়া বাড়ি থেকে মামনি দুবে (৩২) নামে এক মহিলার গলাকাটা দেহ উদ্ধার হয়। সেই ঘটনার ১৭ দিন পর গুজরাতের সুরাত থেকে অভিযুক্তকে পুলিস গ্রেপ্তার করেছে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতের নাম অর্জুন ঘোষ ওরফে বামাপদ। তার আদি বাড়ি দুর্গাপুরে হলেও বর্তমানে অসমে থাকত। ধৃতকে বুধবার রঘুনাথপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়। বিচারক ধৃতের ৭ দিনের পুলিস হেফাজত মঞ্জুর করেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত মামনি দেবীর বাড়ি ছিল ধোবাঘাটা এলাকায়। একসময়ে সেখানেই একটি কারখানায় কাজ করত বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির ডামরা গ্রামের দেবাশিস দুবে। কাজের সূত্রে মামনির সঙ্গে আলাপ হয়। তারপরেই তারা বিয়ে করে। এক বছর আগে দেবাশিসবাবু রঘুনাথপুরের একটি বেসরকারি স্টিল কারখানার ঠিকাদার সংস্থায় সুপারভাইজারের কাজ পান। স্ত্রী ও ১২ বছরের ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে রঘুনাথপুর শহরের একটি ভাড়াবাড়িতে থাকতে শুরু করেন। সেই ভাড়া বাড়ি থেকেই মামনি দেবীর গলাকাটা দেহ উদ্ধার হয়।
ঘটনার দিনেই মৃতার ভাই রঘুনাথপুর থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিস তদন্ত শুরু করে। রহস্য সমাধানে বিভিন্ন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তিরও ব্যবহার করা হয়। প্রযুক্তির ব্যবহারে পুলিস খুনের ঘটনার সঙ্গে অর্জুনের যোগসূত্র খুঁজে পায়। অর্জুনের ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে তাকে সুরাত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিস জানিয়েছে, অর্জুনের দুর্গাপুরে একটি দোকান ছিল। সেখানে প্রায় আড়াই বছর আগে মামনি ও তাঁর স্বামীর সঙ্গে তার আলাপ হয়। ধীরে ধীরে মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় অর্জুনের। তাদের প্রেম যাতে নিশ্চিন্তে চলে সেজন্য অর্জুন মহিলা স্বামীর সঙ্গেও বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। তবে সেই সম্পর্কের জেরে মামনির বিবাহিত জীবনে অশান্তি নেমে আসে। সংসার ঠিক রাখতে মামনি অর্জুনের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতে থাকেন। কিন্তু অভিযুক্ত তাতে বাধা দেয়। তারই মাঝে মামনি স্বামী-পুত্রকে নিয়ে রঘুনাথপুরে চলে আসেন। সেই থেকে অর্জুনের সঙ্গে টানা পোড়েন শুরু হয়। অর্জুন ১৭ মে রঘুনাথপুরে আসে। সেখানে জয়চণ্ডীতে মামণিকে খুন করার চেষ্টা করে। কিন্তু সফল হয়নি। ১৮ মে খবর পায়, তাঁর স্বামী কাজে গিয়েছেন এবং ১২ বছরের পুত্র সন্তান মামাবাড়ি গিয়েছে। মামনির একা থাকার সুযোগ নিয়ে ভাড়া বাড়িতে ঢুকে পড়ে। সেখানে প্রথমে গলায় কাপড় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করার চেষ্টা করে, তাতে সফল না হওয়ায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলায় আঘাত করা হয়। তারপরে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। জেলা পুলিস সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, জেলা পুলিসের তরফ থেকে বিশেষ তদন্ত টিম গঠন করা হয়। অর্জুনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও কেউ জড়িত কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।