মূল্যবৃদ্ধির বাজারে শ্রমিকদের জন্য শিল্পতালুকে মা ক্যান্টিন পুরসভার
বর্তমান | ০৫ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি। তার উপর বেসরকারি সংস্থার স্বল্প বেতনের কাজ। সংসার চালিয়ে নিজের খাওয়ার জন্য টাকা থাকে না। অগত্য জল-মুড়ি খেয়েই দিন কাটিয়ে দেন ক্ষুদ্র কারখানার শ্রমিক থেকে দিনমজুররা। এবার তাঁদের কথা ভেবে শিল্পতালুকের অদূরে মা ক্যান্টিন চালু করল আসানসোল পুরসভা। বুধবার এই ক্যান্টিনের উদ্বোধন করেন আসানসোলের মেয়র বিধান উপাধ্যায়। প্রাথমিকভাবে প্রতিদিন ৩০০জন মানুষ এখানে পাঁচ টাকায় কুপন কেটে খাওয়া-দাওয়া করতে পারবেন। মেনুতে থাকবে ভাত, ডাল, সব্জি ও ডিম।
ক্যান্টিন পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন স্বনির্ভর দলের মহিলারা। সস্তায় গরম ভাত পেয়ে প্রথমদিনেই বেজায় খুশি শ্রমিক থেকে লরি চালক, দিনমজুররা।
এদিন মেয়র বলেন, বাম আমলে জঙ্গি আন্দোলনের জেরে আসানসোল শিল্পাঞ্চল শ্মশানের রূপ নিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে বাংলায় ফের শিল্প ফিরছে। আসানসোলেও শিল্পবান্ধব পরিবেশ গড়ে উঠেছে। শ্রমিক, কারখানায় গাড়ি নিয়ে আসা চালকদের কথা বিবেচনা করে আমরা এখানে মা ক্যান্টিন চালু করেছি। আমরা ব্যবসায়ী ও শ্রমিক উভয়পক্ষের পাশেই রয়েছি।আসানসোলে গড়ে উঠেছিল কন্যাপুর স্যাটেলাইট ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট। বিস্কুট ফ্যাক্টরি সহ বিভিন্ন কারখানাও গড়ে উঠেছিল। এখনও বেশকিছু কারখানা চলছে। সেখানেই দেখা গিয়েছে শ্রমিকদের করুণ দশা। মূল্যবৃদ্ধি সহ কেন্দ্রীয় সরকারের নানা করের চাপে ছোট শিল্প সংস্থাগুলি ধুঁকছে। শ্রমিকদের মজুরিও নামমাত্র। মূল্যবৃদ্ধির আঁচে রাস্তার পাশে থাকা হোটেলগুলিতে খাবারের দামও অনেক বেড়েছে। সেখানে খেতে গিয়ে বিপাকে পড়ছিলেন কারখানার শ্রমিক থেকে গাড়ির চালকরা। শিল্পতালুকে বহু মানুষ দিনমজুরের কাজ করতেও আসে। সকলের সুবিধার জন্যই ক্যান্টিন চালু হয়েছে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন, তৃণমূলের আমলে কোনও শিল্প আসেনি। মা ক্যান্টিনে শ্রমিকদের প্রকৃত উপকার হলে খুশি হব। কিন্তু, মা ক্যান্টিনে মানুষের খাওয়ার যোগ্য খাবার পাওয়া যায় না। বর্তমানে আসানসোল পুরসভার ২১নম্বর ওয়ার্ডের গোবিন্দপুরে এই ক্যান্টিনটি অস্থায়ীভাবে চালু হয়েছে। মেয়র ঘোষণা করেছেন, এখানে স্থায়ীভাবে মা ক্যান্টিনের ভবন গড়ে উঠবে। তারজন্য ২০লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। অস্থায়ী বাঁশের কাঠামোতে চালু হওয়া মা ক্যান্টিনে মা সারদার ছবি টাঙিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলার শ্রাবণী মণ্ডল। তিনি বলেন, মায়ের ইচ্ছায় গরিবদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। বাকিটা তিনিই করে দেবেন। এই এলাকায় বহু গরিব মানুষ রয়েছেন। তাঁদের খুব উপকার হবে। প্রথমদিনই খাবার খেলেন বিবেক কিস্কু, রোহিত হাঁসদা। তাঁরা বলেন, আমাদের আর বাড়ি থেকে মুড়ি নিয়ে আসতে হবে না। এখানেই খেয়ে নেব। আসানসোল পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন পুরসভার অধীনে সাতটি মা ক্যান্টিন চলছে। প্রতিদিন গড়ে ২১০০মানুষ মাত্র পাঁচ টাকার বিনিময়ে খাবার খান। আসানসোলে গোবিন্দপুরে মা ক্যান্টিনের উদ্বোধন করলেন মেয়র বিধান উপাধ্যায়।-নিজস্ব চিত্র