নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘আমি প্রোমোটিং ব্যবসা করি। জোকায় একটি আবাসন তৈরি করছি আমি। তার জন্য ঋণের আবেদন করছি। আমার আয়ের হিসেব, আধার, প্যান ও জমির নথি জমা দিচ্ছি।’
বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের একটি ব্যাঙ্কে এভাবেই ঋণের জন্য আবেদন করেন ‘ছদ্মবেশী’ নির্মাণ ব্যবসায়ী। জাল নথি বানিয়ে ব্যাঙ্কে জমা দেন তিনি। আরও তিনজন বিভিন্নভাবে তাঁকে সাহায্যে করেন। এভাবে ৫০ লক্ষ টাকা ঋণ বাগিয়ে নেয় এই চক্র। পরপর দু’টি কিস্তি না মেটানোয় অ্যাকাউন্ট যাচাই করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় মধ্য কলকাতার ওই বেসরকারি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। দেখা যায়, ঋণ পাওয়ার জন্য জমা করা যাবতীয় নথিই জাল। তৎক্ষণাৎ হেয়ার স্ট্রিট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। তদন্তভার নেয় লালবাজারের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখা। পরবর্তী তদন্তে ফাঁস হয়ে যায় শহরে সক্রিয় একটি বড়সড় প্রতারণা চক্রের কারবার। জোকা সহ কলকাতার চার জায়গায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছেন গোয়েন্দারা।
পুলিস জানিয়েছে, ধৃতদের নাম শেখ শানু, দেবপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়দীপ ঘরামি ও সম্রাট গুহ । মঙ্গলবার রাতভর কড়েয়া, রবীন্দ্রনগর, বিষ্ণুপুর ও ঠাকুরপুকুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে চার অভিযুক্তকে পাকড়াও করে পুলিস। তদন্তে জানা যায়, শেখ শানুই ঋণের জন্য আবেদন করেন ওই ব্যাঙ্কের শাখায়। প্রোমোটার সেজে তিনিই জাল নথিপত্রগুলি ব্যাঙ্কে জমা করেন। তদন্তকারীদের দাবি, এই সব জাল নথি শানুকে বানিয়ে দেন দেবপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়। নেপথ্যে থেকে গোটা বিষয়টির পরিকল্পনা করেন জয়দীপ ও সম্রাট। একটি সাইবার কাফে থেকে জাল আধার, প্যান তৈরি করানো হয়। সেই কাফে’র মালিকও কি এই প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘এই চারজন ছাড়াও চক্রের সঙ্গে আরও বেশ কয়েকজন জড়িত বলেই মনে হচ্ছে। ধৃতদের জেরা করে তাঁদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। পরবর্তী তদন্তের স্বার্থে ধৃতদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।’ সেই মতো আবেদনের ভিত্তিতে এদিন ব্যাঙ্কশাল আদালত ধৃত চারজনকে ১৩ জুন পর্যন্ত পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।