রংয়ের মিস্ত্রির অ্যাকাউন্টে বছরে দেড় কোটি টাকার লেনদেন! গ্রেপ্তার সাইবার প্রতারণা চক্রের ৬ সদস্য
বর্তমান | ০৫ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: সাইবার প্রতারণার মাধ্যমে হাতানো টাকা জমা হচ্ছিল ভাড়া নেওয়া অ্যাকাউন্টে। সময়-সুযোগ বুঝে সেই টাকা তুলে নিচ্ছিল প্রতারকরা। যাঁর অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিয়ে এই কারবার চালাচ্ছিল প্রতারকরা, তিনি পেশায় একজন রং মিস্ত্রি। পরবর্তী সময়ে তিনি এই কারবারের বিপদ বুঝতে পেরে নতুন করে অ্যাকাউন্ট ভাড়া দিতে চাননি। তা নিয়ে শুরু হয়েছিল দু’পক্ষের ঝামেলা। সেই খবর পেয়ে তদন্ত শুরু করে নিমতা থানার পুলিস। এবার তাদের বিস্মিত হওয়ার পালা! কারণ, ইতিমধ্যে ওই রং মিস্ত্রির অ্যাকাউন্টে চার রাজ্যের সাইবার প্রতারণার প্রায় দেড় কোটি টাকা ঢুকেছিল। প্রতারণার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে পুলিস ওই রং মিস্ত্রি, এক ব্যঙ্ককর্মী সহ মোট ছ’জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ধৃতদের বুধবার বারাকপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক পাঁচদিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিয়ে দু’পক্ষের ঝামেলার খবর পৌঁছয় নিমতা থানায়। পুলিস নিমতা থানা এলাকা থেকে সৌরভ কর, প্রসূন দাস, শুভঙ্কর সরকার, সুরঞ্জন সরকার ছাড়াও বরানগরের রাজা লোহার ও ভাটপাড়ার ব্যাঙ্ককর্মী প্রিয়ব্রত ঘোষকে গ্রেপ্তার করে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, নিমতার ডাক্তারবাগানের বাসিন্দা সৌরভই পেশায় রং মিস্ত্রি। একটি সূত্র মারফৎ ভাটপাড়ার ব্যাঙ্ককর্মী প্রিয়ব্রত ঘোষ ওরফে আকাশের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছিল। সে সৌরভকে প্রলোভন দেখিয়ে বলে, তাঁর অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা রাখা হবে। বিনিময়ে অ্যাকাউন্টের ভাড়া হিসেবে মাসে মাসে তাঁকে টাকা দেওয়া হবে। শর্ত হিসেবে বলা হয়েছিল, ব্যাঙ্কের পাশবই, সই করা চেক সহ ব্যাঙ্কের যাবতীয় কাগজপত্র তাদের দিয়ে দিতে হবে। মুফতে টাকা পাওয়ার লোভে সব শর্তেই রাজি হয়েছিলেন সৌরভ। কিন্তু গত এক বছরে তাঁর অ্যাকাউন্টে ঢোকা বিপুল পরিমাণ টাকার মেসেজ দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিলেন তিনি। ব্যাঙ্ক থেকেও তাঁর কাছে ফোন এসেছিল। ফলে সৌরভ বুঝত. পারেন, তাঁর অ্যাকাউন্টে ঢুকছে প্রতারণার অর্থ। ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কায় তিনি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছিলেন। চলতি সপ্তাহে দুই প্রতারক তাঁর বাড়িতে এসে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নতুন করে খোলার জন্য চাপাচাপি করে বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে নিমতা থানার পুলিস ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পক্ষকেই জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরপর সৌরভের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ডিটেইলস দেখতে গিয়ে তাঁদের ভিরমি খাওয়ার মতো অবস্থা হয়। কারণ, গত এক বছরে প্রায় দেড় কোটির বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে সেখানে। ওই টাকা এসেছে কেরল, গুজরাত, উত্তরাখণ্ড ও বিহার থেকে। সাইবার প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে পুলিস মঙ্গলবার রাতে সৌরভ সহ মোট ছ’জনকে গ্রেপ্তার করে। এই চক্রে আরও অনেকে যুক্ত বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। এখনও পর্যন্ত তাঁরা জেনেছেন, সাইবার প্রতারণার অর্থ সৌরভ সহ নিমতার প্রায় ১০ জনের অ্যাকাউন্টে ঢুকত। তার জন্য প্রত্যেককে মাসে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হতো। এই ধৃতদের সঙ্গে এক বিচারাধীন বন্দিরও যোগসূত্র রয়েছে। চক্রের বাকি সদস্যদের খোঁজে পুলিস তল্লাশি শুরু করেছে।