• ফাঁদ পেতে আটকে রেখে মারধর-লুটপাট, বাদুড়িয়া থেকে পাকড়াও প্রতারক চক্রের ৫
    বর্তমান | ০৫ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বাতিল দু’হাজার টাকা পাল্টে দিলে দেওয়া হবে দ্বিগুণ অর্থ। এই টোপ  কেউ গিলে বদলানোর জন্য টাকা নিয়ে হাজির হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আটকে রেখে মারধরের পর কেড়ে নেওয়া হতো পুরো টাকা। কলকাতা, বারাসত, বসিরহাটসহ বিভিন্ন জায়গায় চলছিল প্রতারণা। শেষ পর্যন্ত বাদুড়িয়া থানার পুলিসের হাতে গ্রেপ্তার হলো পাঁচ প্রতারক। দেগঙ্গায় বসে জালিয়াতি চালানো চক্রের মূল পান্ডা আসাদুল্লা এখনও পলাতক। 

    বসিরহাট জেলা পুলিস সূত্রে খবর, এই মামলায় অভিযোগকারী সোমনাথ দত্তর একটি মোবাইল ফোন বিক্রির দোকান রয়েছে। সেই সঙ্গে বাতিল দু’হাজার টাকাও কিনে থাকেন। সেই সূত্রেই কয়েকদিন আগে এক মিডলম্যান এসে বলে দেগঙ্গার বাসিন্দা কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছে বিপুল পরিমাণ দু’হাজার টাকা নোট রয়েছে। আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার সূত্রে তা পেয়েছেন। বাদুড়িয়ার ওই ব্যবসায়ীকে টোপ দেওয়া হয় তিনি  আড়াই লক্ষ টাকা  দিলে বিনিময়ে সাড়ে তিনি সাড়ে তিন লক্ষের বেশি টাকা পাবেন। তাঁকে পাঁচশো টাকার নোট দিতে হবে। তিনি প্রস্তাবে রাজি হলে তাঁকে গত ৩০ মে বাদুড়িয়া এলাকায় আসতে বলা হয়। সেখানে প্রতারকদের একজন দেখা করার পর বেশ কয়েকটি জায়গা ঘুরিয়ে আনা হয় একটি বাড়িতে। সেখানে তাঁকে আটকে রেখে প্রথমে মারধর করে অভিযুক্তরা। এরপর তাঁর কাছ থেকে আড়াই লক্ষ টাকা কেড়ে নিয়ে ছেড়ে দেয়। টাকা খুইয়ে তিনি বাদুড়িয়া থানায় অভিযোগ করলে সাব ইনসপেক্টর সন্দীপ সরকারের নেতৃত্বে তদন্ত শুরু হয়। অভিযোগকারী জানান, বাতিল নোট কিনে তিনি সেগুলি রিজার্ভ ব্যাঙ্কে জমা দিতেন। তার বিনিময়ে টাকা পেতেন।  বাড়তি যে টাকা পার্টি দিয়ে থাকে, সেটাতেই লাভ থাকে। 

    তদন্তে নেমে পুলিস যে মোবাইল থেকে অভিযোগকারী অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলেছিল, তার  ডিটেইলস নেয়। মোবাইলের সাবস্ক্রাইবার আইডি ধরে প্রত্যেকের পরিচয় জানা যায়। কোথায় অভিযোগকারীকে আটকে রাখা হয়েছিল, তার লোকেশনও পেয়ে যান তদন্তকারীরা। সেখান থেকে তাঁরা নিশ্চিত হন ঘটনাটি ঘটেছে। মোবাইলের সূত্র ধরে সাদেক মোল্লা সহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, কারা দু হাজার টাকার নোট কেনেন, এই চক্র তার খোঁজ রাখত। এরজন্য এজেন্ট বা মিডলম্যান রেখেছিল। তাদের মাধ্যমে বাতিল নোট কেনা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হতো। এজেন্ট বা মিডলম্যানরা বলত, তাদের পরিচিত ব্যবসায়ীদের কাছে বাতিল দু’হাজার টাকা রয়েছে। কিন্তু সেগুলি চালাতে পারছে না। কেউ টোপ গিললেই বলা হতো যিনি কিনবেন, তাঁকে দু’গুণ টাকা দেওয়া হবে। চক্রটি এভাবে বারাসত, কলকাতা, বসিরহাটের বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা হাতিয়েছে। দেগঙ্গাকে ‘এপি সেন্টার’ করে মূল কারবারটি চলছে। বিভিন্ন ব্যবসায়ীর থেকে লুট করা টাকা কোথায় রাখা হয়েছে, তা ধৃতদের জেরা করে জানার চেষ্টা চলছে।
  • Link to this news (বর্তমান)