এই সময়, পাঁশকুড়া: অত্যধিক তাপের কারণে জেলার সমস্ত প্রাইমারিতে মর্নিং স্কুলের নির্দেশ দিয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নিষেধাজ্ঞার পর তড়িঘড়ি মর্নিং স্কুলের নির্দেশিকা প্রত্যাহার করে নিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ।
বুধবার নতুন নির্দেশিকা হাতে পাওয়ার আগেই জেলার সমস্ত প্রাইমারি স্কুলে সকালে পঠনপাঠন শুরু হয়ে যায়। আজ বৃহস্পতিবার থেকে আগের মতো দুপুরে স্কুল চালানোর নির্দেশ মিলেছে। তীব্র গরমের মধ্যে কেন মর্নিং স্কুলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হলো, তা নিয়ে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। ঘনঘন সিদ্ধান্ত বদলের ঘটনায় বিরক্ত শিক্ষকরাও।
এক মাস দু’দিন গরমের ছুটির পর গত সোমবার সমস্ত স্কুল খোলে। সপ্তাহ খানেক ধরে পূর্ব মেদিনীপুরে তীব্র গরম। মাঝেমধ্যে চলছে তাপপ্রবাহ। গরমের হ মঙ্গলবার মর্নিং স্কুলের বিজ্ঞপ্তি দেয় পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ। সেই মতো সমস্ত স্কুলে মর্নিং স্কুলের কথা ঘোষণা করে দেন শিক্ষকরা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ জানিয়ে দেয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি ছাড়া কোনও জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ মর্নিং স্কুলের নির্দেশ দিতে পারবে না।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের এই নোটিস পেয়ে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত বদল করে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ। মঙ্গলবার গভীর রাতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মর্নিং স্কুলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে এও বলা হয় আগের মতো দুপুরেই স্কুল চলবে। গরমে পড়ুয়াদের সুরক্ষিত রাখতে প্রধানশিক্ষকরা স্কুলে ‘ওয়াটার ব্রেক’ চালু করবেন। যাতে পড়ুয়ারা নির্দিষ্ট সময় অন্তর জল পান করে।
পাঁশকুড়ার জিয়াখালি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তমাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘শিক্ষাকে নিয়ে খামখেয়ালিপনা চলছে। আজ মর্নিং স্কুল করলাম। সকাল ৮ টায় বলা হলো মর্নিং স্কুলের নির্দেশ বাতিল। এখন যে ভাবে গরম তাতে পড়ুয়াদের সুরক্ষিত রাখতে মর্নিং স্কুলই দরকার।
অভিভাবকরা আমাদের দোষারোপ করছেন। আমার সবার কাছে হাসির পাত্র হয়ে উঠছি।’ কোলাঘাটের এক অভিভাবক বলেন, ‘সমস্ত স্কুলে পাখা নেই। এই গরমে কী ভাবে পড়াশোনা করবে শিশুরা?
কার ভালো করার জন্য সিদ্ধান্ত বদল হলো জানি না। তবে এতে শিশুদের ক্ষতি হবে। অত্যধিক গরমে আমার শিশুকে আমি স্কুলে পাঠাব না। আগে শরীর পরে পড়াশোনা।’
স্কুলের নির্ঘণ্ট বদলের ক্ষেত্রে যে ভাবে রাজ্যের সমস্ত জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের ক্ষমতা কার্যত কেড়ে নেওয়া হলো তা নিয়ে সরব বিরোধী শিক্ষক সংগঠনগুলি।
বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র বেরা বলেন, ‘প্রতি বছর এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত মর্নিং স্কুলের সিদ্ধান্ত ঘোষিত থাকত। এ বারও আমরা মিটিংয়ে এ বিষয়ে চেয়ারম্যানকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু দেখলাম ছুটির ক্যালেন্ডার থেকে মর্নিং স্কুলের বিষয়টি তুলে দেওয়া হয়েছে।’
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘পর্ষদের সিদ্ধান্ত মেনে আমরা পুরোনো রুটিন মেনে ক্লাস চালানোর নির্দেশ দিয়েছি। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি বলেছেন তিনি অসুবিধার বিষয়গুলি মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আনবেন। মুখ্যমন্ত্রীকে এ বিষয়ে অবগত করানো গেলে আশা করছি সমস্যার সমাধান হবে।’