• এখানে প্রাণের স্রোত আসে যায়..., অসহায় শুশুক, ওরাও বাঁচুক
    এই সময় | ০৫ জুন ২০২৫
  • অভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, কাটোয়া

    গত ডিসেম্বরের ঘটনা। কাটোয়ার ভাগীরথী থেকে উদ্ধার হয়েছিল দু’টি গাঙ্গেয় ডলফিন বা শুশুকের নিথর দেহ। গত মাসে আবারও উদ্ধার হয় আরও এক শুশুকের দেহ।

    ক্যালেন্ডার ধরে যদি আরও পিছিয়ে যাওয়া যায়, দেখা যাবে এ অঞ্চলে এই অসহায় প্রাণীর মৃত্যু নতুন কিছু নয়। কয়েক দিন বা কয়েক মাসের ব্যবধানে শুশুকের সংখ্যা ক্রমশ কমছে।

    অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, শুশুকের এমন মৃত্যু স্বাভাবিক নয় মোটেও। কখনও পিটিয়ে, কখনও ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করা হচ্ছে তাকে। যে অঞ্চলে এ ধরনের প্রাণী পাওয়া যায়, সেই জলজ বাস্তুতন্ত্রের সর্বোচ্চ স্তরের খাদক এই শুশুক।

    তার এমন মর্মান্তিক এবং ধারাবাহিক মৃত্যু যেমন ক্রমে শেষের পথে নিয়ে যাচ্ছে দেশের জাতীয় জলজ প্রাণীকে।

    শুশুক এ ভাবে মরতে থাকলে প্রভাব পড়বে বাস্তুতন্ত্রেও। ভেঙে পড়বে খাদ্যশৃঙ্খল। জলের নীচের এই বাসিন্দাকে বাঁচানোর জন্য সার্বিক ভাবে উদ্যোগী হওয়া দরকার বলে মনে করছেন পরিবেশ সচেতন মানুষ।

    গাঙ্গেয় ডলফিন বা শুশুক সংরক্ষণের আওতায় লাল তালিকাভুক্ত। তবে কাটোয়া সংলগ্ন ভাগীরথীতে দেখা মেলে এর। কিন্তু বর্তমানে এর জীবন বিপন্ন। ক্রমাগত জল দূষণ এমনিতেই জলের নীচের বাস্তুতন্ত্র নষ্ট করছে।

    এক দিকে যেমন বহু জলজ জীব মারা পড়ছে, অন্য দিকে অনেকের স্বাভাবিক বিচরণক্ষেত্রই নষ্ট করে দিচ্ছে দূষণ। এর পরেও যারা থেকে যাচ্ছে, তাদের অনেককে মরতে হচ্ছে বেঘোরে।

    শুশুকের মূল শত্রু মাছ ধরা জাল। জালে তা আটকে গেলেই তাকে মেরে ফেলা হচ্ছে নির্দয় ভাবে। জেলেরা নিজেদের জাল বাঁচাতেই মেরে ফেলছে এই নিরীহ জলজ প্রাণীকে। অনেক সময়েই শ্বাসনালিতে জাল আটকেও মারা যায় শুশুক।

    জাল থেকে মাছ ধরে খেতে গিয়েই এই বিপদ ঘটায় তারা। ২০২০ সালে একটি মৃত শুশুকের ময়নাতদন্ত করে দেখা যায়, পেটের ভিতরে প্রায় ৩ কেজি ওজনের একটি জালের বল আটকে আছে। তার থেকেই মৃত্যু।

    পাশাপাশি ইলেকট্রিক জালও ব্যাপক ক্ষতি করছে শুশুক-সহ অন্য জলজ প্রাণীদের। জেলেরা নদীতে বিদ্যুৎ তরঙ্গ দিয়ে মাছ শিকার করছেন অনেক সময়েই। এতে মাছের সঙ্গে শুশুকের মতো অসহায় প্রাণীও মারা পরছে।

    পাশাপাশি এতে প্রচুর ছোট মাছ মারা পড়ায় তৈরি হচ্ছে খাদ্য সঙ্কটও। পরিবেশকর্মী গণেশ চৌধুরী বলছিলেন, ‘গাঙ্গেয় শুশুক কিন্তু এই পরিবেশেরই সম্পদ। তাদের সংখ্যা যদি কমে যেতে থাকে, তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাস্তুতন্ত্রেও।

    আমরা চাই ওদের বাঁচাতে কঠোর হোক প্রশাসন। পাশাপাশি ইলেকট্রিক জালের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করার ব্যবস্থা করা হোক।’ কাটোয়ার রেঞ্জার শিবপ্রসাদ সিনহার বক্তব্য, ‘আমরা এ নিয়ে ধারাবাহিক প্রচার চালাই। ডলফিন বা গাঙ্গেয় শুশুককে বাঁচতে প্রচারে আরও জোর দেওয়া হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)