• স্কুল পরিচালনায় AI প্রযুক্তি বেলুড়ে
    এই সময় | ০৫ জুন ২০২৫
  • সৌমিত্র ঘোষ, বেলুড়

    বেলুড় স্কুলের পরিচালন ব্যবস্থা ও শিক্ষাক্রম নির্ধারণেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিচ্ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সরকারি সাহয্যপ্রাপ্ত এই স্কুলের নিজস্ব ওয়েবসাইট তো রয়েইছে, এই বছরে স্কুলে একাদশ শ্রেণির ভর্তিও হয়েছে সম্পূর্ণ অনলাইনে।

    বিলডেস্ক নামের বিনামূল্যের পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করে একাদশের ছাত্রছাত্রীরা তাদের ভর্তির যাবতীয় টাকা অনলাইনেই জমা করতে পেরেছে স্কুলের নতুন ব্যবস্থার মাধ্যমে।

    স্কুলের শিক্ষাক্রম থেকে সমস্ত ছাত্রছাত্রীর যাবতীয় তথ্য স্কুলের ওয়েবসাইটের তথ্যভাণ্ডারে রয়েছে। এমনকী, প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানো হয় ওয়েবসাইটে, তাদের ছবি-সহ।

    সম্প্রতি বেলুড় হাইস্কুলের সাধারণ পরিচালন ব্যবস্থায়, স্কুলের দৈনন্দিন কাজকর্মে, একাদশ শ্রেণির ভর্তি প্রক্রিয়া, স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল ও পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন-সহ স্কুলের সারা বছরের শিক্ষাক্রম, ছুটির ঘোষণা—সবই ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে।

    স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ক্লাসের রুটিনও অনলাইনে বা ওয়েবের সঙ্গে সংযুক্ত অ্যাপের সাহায্যে দেখে নিতে পারছেন। এমনকী, তাঁদের চাকরি ও বেতন সংক্রান্ত ব্যক্তিগত জরুরি তথ্যও তাঁরা অ্যাপের সাহায্যে জেনে নিতে পারছেন।

    স্কুলের কার্যক্রম বা রুটিনে কোনও পরিবর্তন হলেও শিক্ষক–শিক্ষিকারা তা অনলাইনেই জেনে নিতে পারছেন। আর এই সব ব্যবস্থা কোনও বাণিজ্যিক সংস্থাকে দিয়ে বানানো হয়নি।

    সবটাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহ শিক্ষকরা নিজেদের প্রচেষ্টায় চ্যাট জিপিটি, জেমিনি বা ক্লদের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটবটের সাহায্য নিয়ে নিজেরাই বানিয়ে ফেলেছেন।

    স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোজকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘এখন স্কুলের অনেক কাজ বেড়েছে। শিক্ষকদের শুধু ক্লাস নেওয়া ও পরীক্ষা নেওয়ার বাইরেও অনেক সরকারি কর্মসূচি ও শিক্ষাক্রমের বাইরের কাজও করতে হচ্ছে।

    ফলে প্রযুক্তিগত সাহায্য নেওয়া ছাড়া বিকল্প কিছু নেই আমাদের সামনে। এ জন্য আমরা যতদূর সম্ভব খরচ না বাড়িয়ে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিয়ে নিজেরাই স্কুলের নিজস্ব প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থা উন্নত করছি।’

    তিনি জানান, এর ফলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ক্লাস নেওয়ার বাইরের অন্য কাজে অতিরিক্ত মাথা ঘামানো ও কাজের বোঝা অনেকটাই কমানো সম্ভব হয়েছে। তাঁরা ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার দিকে বেশি নজর দিতে পারছেন।

    এ রাজ্যের সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে এখন সবুজসাথীর সাইকেল, কন্যাশ্রীর প্রকল্প–সহ অন্য নানা সরকারি প্রকল্প স্কুল কর্তৃপক্ষকেই দায়িত্ব নিয়ে পালন করতে হয়। এ সবের ফলে শিক্ষা কার্যক্রম অনেক সময়েই ব্যাহত হয়।

    স্কুলে প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে, সে সব কাজ এখন অনেক সহজেই করতে পারছেন কর্তৃপক্ষ, এমনই জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। তাঁর দাবি, এইসব ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে, এই বছরে একাদশে স্কুলে ভর্তিও বেড়েছে। আগের বছর যেখানে বিজ্ঞান, কলা ও বাণিজ্য মিলিয়ে ১২২ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছিল, এই বছরে ১৬২ জন ভর্তি হয়েছে।

    রাজ্যে সরকারি স্কুলগুলিতে যেখানে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ক্রমেই কমছে, সেখানে বেলুড় হাইস্কুলে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে স্কুল পরিচালনায় প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থার সুফল মিলেছে বলেই দাবি তাঁর।

    বেলুড় হাইস্কুলের এইসব কর্ম উদ্যোগে মূলত রাইট টু এডুকেশন অ্যাক্ট’ বা শিক্ষার অধিকার আইনের মূল ভাবনাকে বাস্তবায়নের কথা ভাবা হয়েছে। অ্যাপ বা ওয়েবসাইট তৈরির মাধ্যমে আগামীতে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মী-সহ সকলের উপস্থিতি এবং যাবতীয় তথ্য ওয়েবসাইট ও অ্যাপে প্রকাশ করা হবে, সেই ভাবনাও রয়েছে স্কুলের।

    শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মীদের স্কুলে হাজিরাতে প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। শুধু সরকারী অনুদান নির্ভর নয়, নিজস্ব উদ্যোগ, চিন্তাভাবনা নিয়ে এগোতে পারলে যে স্রোতের বিপরীতে গিয়ে সীমিত সম্পদ দিয়েও বিপুল সম্ভাবনা সৃষ্টি করা যায়, তা দেখাচ্ছেন বেলুড় হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা-সহ স্কুল কর্তৃপক্ষ।

  • Link to this news (এই সময়)