সুভাষ দত্ত, পরিবেশকর্মী
অনেকে উত্তরবঙ্গকে সুইৎজ়ারল্যান্ড হিসেবে তৈরি করতে চাইছেন। আসলে উত্তরবঙ্গ তো দেশের গ্রিন ল্যান্ড। পশ্চিমবঙ্গের চার ভাগের এক ভাগ মাত্র উত্তরবঙ্গ। কিন্তু পরিবেশের দিক থেকে মূল্যায়ন করলে সমগ্র রাজ্যের চার গুণ বেশি প্রাকৃতিক বৈচিত্রে ভরপুর এই উত্তরবঙ্গ।
তুষারমৌলি শৃঙ্গরাজি, সবুজে ঘেরা পাহাড়, গভীর শ্যামল অরণ্য, সেখানে কত পাখি, কত বন্যপ্রাণী, কত ঝর্নার নেমে আসা, কত নদীর বয়ে যাওয়া। সবুজ চা বাগান। সব থেকে ভালো কালো নুনিয়া আর তুলাইপাঞ্জি চাল।
পাট আর তামাক। দু’হাত উজাড় করা প্রকৃতি এখানে উদার। দেশের নানা প্রান্তে প্রকৃতির মধ্যে আমি ঘুরে দেখেছি, তারপরেও উত্তরবঙ্গকে প্রকৃতির খনি বললে বিন্দুমাত্র অতিশয়োক্তি হবে না।
কিন্তু আমরা ধ্বংসের খেলায় নেমেছি। উত্তরবঙ্গের সর্বত্র তুমুল অত্যাচার শুরু করেছি। দু’টি নির্দিষ্ট জায়গার কথা বলতে চাই। উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে পুরোনো সংরক্ষিত অরণ্য জাতীয় উদ্যান দার্জিলিংয়ের সিঞ্চল অভয়ারণ্য। সেখানে বিখ্যাত সিঞ্চল লেক। দার্জিলিংয়ে এই জলের ভাণ্ডার প্রকৃতির অপূর্ব দান, সেখানেও কিন্তু আমরা ধ্বংসের কাজ শুরু করেছি।
টাইগার হিলকে কংক্রিট হিল তৈরি করার কাজ শুরু হয়েছে। সৌদি আরবে রামসার সম্মেলনে জীববৈচিত্র, বাস্তুতন্ত্র এবং অন্যান্য কারণে গুরুত্বপূর্ণ। রামসার সাইট হিসেবে সমগ্র বিশ্বে যে ক’টি জায়গার নাম উঠে এসেছে, তার মধ্যে উত্তরবঙ্গের একমাত্র বক্সা বাঘবন স্থান পেয়েছে।
সেই অরণ্যে যেখানে বাঘ থাকার কথা, সেখানে মানুষের বসতি দেখে আমি অবাক হয়েছি। ফলে, মামলা করতে বাধ্য হয়েছি। ডুয়ার্সের একটা বিস্তীর্ণ এলাকার দূষণের কারণ ঘটাচ্ছে ভুটানের অপরিকল্পিত ডলোমাইট খাদান। নদীগুলোর স্বাভাবিক গতিকে মানুষ নানা ভাবে রুদ্ধ করার চেষ্টা করছে।
উত্তরের প্রকৃতি এতটাই শক্তিশালী যে এখনও এই যাবতীয় কাজকর্মের পরেও সে লড়াই করে নিজেকে টিকিয়ে রেখেছে, সমৃদ্ধ রেখেছে। কিন্তু উত্তরবঙ্গের ভূগোল, জাতির ইতিহাস না-হয়ে যায়!
সে জন্য উত্তরবঙ্গের মানুষকে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ শুরু করতে হবে। উত্তরবঙ্গের ভূগোলকে ইতিহাস হতে দেওয়া যাবে না, এটাই হোক এ বারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসে উত্তরবঙ্গকে বাঁচাবার স্লোগান।
সবুজ প্রকৃতি উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্য। সেখানকার মানব সম্পদের মানও অনেক ভালো। প্রকৃতি তাঁদের আদর–ভালোবাসা দিয়ে তৈরি করেছে। তাই সেখানকার মানুষ আমার আবেদন বুঝবেন নিশ্চয়ই।