• বিকেল হলেই আমের টানে বাগানে হাজির হাতি
    এই সময় | ০৫ জুন ২০২৫
  • এই সময়, বাঁকুড়া: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর লিখেছিলেন, ‘জল পড়ে পাতা নড়ে, পাগলা হাতি মাথা নাড়ে।’

    কিন্ত বাঁকুড়ার বড়জোড়ার দক্ষিণ সরাগাড়া গ্রামে সেই লাইন খানিকটা পাল্টে গিয়েছে। তা দাঁড়িয়েছে, ‘জল পড়ে পাতা নড়ে, চেন বাঁধা হাতি মাথা নাড়ে।’

    আমের প্রেমে পড়েছে হাতি। এখন আমের ভরা মরশুম। রাজ্য জুড়ে ল্যাংড়া, ফজলি, গোপালভোগ, হিমসাগর, মোহনভোগ, লক্ষ্মণভোগের মতো নানা প্রজাতির বাহারি মরশুম। কিছু দিন পরেই উঠবে ফজলি।

    আম প্রিয় বাঙালির সঙ্গে এ বার পাল্লা দিচ্ছে হাতিও। বাঁকুড়া (উত্তর) বনবিভাগের বড়জোড়া রেঞ্জের সংগ্রামপুর বিটের তিনের মাইল জঙ্গল থেকে একটি দাঁতাল হাতি প্রতিদিন বিকেলে দক্ষিণ সরাগাড়া গ্রামে এসে নিয়ম করে আম খেয়ে যাচ্ছে।

    গ্রামের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ কুণ্ডু, সুশান্ত দে, দীনবন্ধু কুণ্ডুরা বলছেন, ‘বেশ কিছুদিন বিকেল হলেই ‘চেন বাঁধা’ হাতি চলে আসে আমাদের গ্রামে আম খেতে। গোটা সাতেক আম গাছ আছে আমতলায়।’

    দক্ষিণ সরাগাড়া গ্রামের নারায়ণচন্দ্র কুণ্ডুর মন্তব্য, ‘চারটি দলছুট হাতি রয়েছে। একটা দলের সঙ্গে যেতে যেতে মেদিনীপুর, বিষ্ণুপুর থেকে ঘুরে এখানে চলে এসেছে। এখন পাকা আম ঝরে পড়ছে। আমাদের এখানে শ্যামপুর, ডকাইসিনি বাগান রয়েছে।

    সেখানে আম এবং কাঁঠালের বাগান রয়েছে। তার সন্ধান পেয়ে গেলে আর জায়গা থেকে সরতে চাইছে না। ওদের দাপটে চাষ প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছে। জমি তছনছ করে দিচ্ছে। এখন ওদের আম খাওয়ার সময়। রোজ বিকেলে আমতলায় আসবে। আবার গ্রামেও চলে আসে ওরা।’

    সংগ্রামপুর বিট অফিসার জয়ন্ত ঘোষ বলেন, ‘খাবার না-পেয়ে আম-ই এখন প্রিয় হয়ে গিয়েছে হাতিটির কাছে। একটা হাতি দিনে প্রায় এক কুইন্টাল খাবার খেতে পারে। হাতি মিষ্টি পাকা আম ছাড়া খায় না। আম যদি টক হয়, তা হলে মুখেই তুলবে না। রাতে ঝড়বৃষ্টিতে আম ঝরে পড়ছে আর ওরা দেদার খেয়ে চলেছে।’

    তিনি যোগ করেন, ‘মঙ্গলবার রাত থেকে চারটি হাতি দক্ষিণ সরাগাড়ায় রয়েছে। বাজ পড়ছে, বৃষ্টি হচ্ছে। হুলা দলের সদস্যরা হাতিগুলির উপরে নজর রেখেছেন। ওরা যাতে গ্রামে না–ঢুকে পড়ে, সেটা খেয়াল রাখা হচ্ছে। কোনও অবস্থায় যেন ক্ষয়ক্ষতি না-হয়।’

    মঙ্গলবার সকালে তিনটি হাতি বেলিয়াতোড় রেঞ্জের লাদুনিয়া-২ এবং কাঁটাবেস-১ থেকে বড়জোড়া রেঞ্জে চলে আসে। ‘চেন বাঁধা’ হাতি পাবয়া জঙ্গলে ছিল আগে থেকেই। বড়জোড়া রেঞ্জের রেঞ্জার সৈয়দ সইফ-উর-রহমান বলছেন, ‘বুধবার পর্যন্ত বড়জোড়া রেঞ্জের দক্ষিণ সরাগোড়া–৪ অঞ্চলে ৪টি হাতি রয়েছে। বাঁকুড়া (উত্তর) বন বিভাগকে নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বনদপ্তরের কর্মীরাও রয়েছেন।’

  • Link to this news (এই সময়)