• কেষ্ট নীরব, সেই আইসি-র হাতছাড়া হলো সব মামলা
    এই সময় | ০৫ জুন ২০২৫
  • এই সময়: অভিযোগকারী বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারের দু’টি মোবাইল ‘তদন্তের স্বার্থে’ মঙ্গলবারই বাজেয়াপ্ত করেছিল পুলিশ। এ বার যে সব মামলার তদন্তকারী অফিসার বা আইও ছিলেন তিনি, সেই সব মামলা থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হলো তাঁকে।

    আর অভিযুক্ত? লিটন হালদারকে ফোন করে অশ্রাব্য গালিগালাজ ও তাঁর মা–স্ত্রীর নাম করে হুমকির ঘটনায় অভিযুক্ত অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্টকে তৃতীয় দফায় হাজিরার নোটিস বুধবার পর্যন্ত পাঠানো হয়নি পুলিশের তরফে। ডাক্তারের মেডিক্যাল সার্টিফিকেট অনুযায়ী, ‘অসুস্থতা’র জন্য পাঁচদিনের ‘বেড রেস্টে’ রয়েছেন কেষ্ট।

    রবিবার যে হেতু পুলিশের কাছে ওই মেডিক্যাল সার্টিফিকেট জমা দেওয়া হয়েছিল, তাই তাঁর ‘বেড রেস্টে’র মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা আজ, বৃহস্পতিবার। তারপরে কি তা হলে কেষ্টকে তৃতীয় নোটিস পাঠাবে পুলিশ? তাঁর মোবাইল কি বাজেয়াপ্ত হবে? নাকি তদন্তকারী অফিসার নিজেই তাঁর বাড়িতে যাবেন জিজ্ঞাসাবাদ করতে? এ নিয়ে এখনও মুখে কুলুপ জেলা পুলিশের কর্তাদের।

    একজন পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে অতীতে বিভাগীয় তদন্ত হয়ে থাকলেও যে ভাবে তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে উদ্দেশ করে ছাপার অযোগ্য ভাষায় গালাগালি করেছেন একজন রাজনৈতিক নেতা এবং তারপরেও তাঁর মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা বা মেডিক্যাল সার্টিফিকেটের সত্যতা যাচাই নিয়ে পুলিশের তরফে কোনও কঠোর পদক্ষেপ সামনে আসেনি, তাতে পুলিশের একাংশের মধ্যেই ক্ষোভ দানা বাঁধছে।

    সেটা টের পাচ্ছেন শীর্ষ পুলিশকর্তারাও। তাই ‘বেড রেস্টে’র মেয়াদ শেষ হলেও অনুব্রত যদি হাজিরা না–দেন, সে ক্ষেত্রে পুলিশ কী পদক্ষেপ করে, সেটাই এখন দেখার। ঘটনাচক্রে কেষ্টর মতোই তাঁর অনুগামী টিএমসিপি–র যে ছাত্রনেতা বিক্রমজিৎ সাউ ফেসবুক লাইভ করে বোলপুরের আইসিকে আক্রমণ করেছিলেন, তাঁকে বুধবার তলব করেছিল পুলিশ।

    আগেই ওই ছাত্রনেতাকে সাসপেন্ড করেছিল টিএমসিপি। এ দিন সকাল ১০টার মধ্যে তাঁকে থানায় হাজিরা দিতে বলা হয়। লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতে এ দিন সকাল ছ’টা থেকে সাড়ে ছ’টার মধ্যে থানায় পৌঁছে যান বিক্রমজিৎ।

    সূত্রের খবর, প্রায় এক ঘণ্টা সিউড়ি থানায় ছিলেন তিনি। তবে তাঁর হাজিরার জন্য কি তদন্তকারী অফিসার এত সকালে থানায় পৌঁছে যান? তার ব্যাখ্যা মেলেনি পুলিশের তরফে। যেমন ব্যাখ্যা মেলেনি কেষ্টর মেডিক্যাল সার্টিফিকেট এবং তাতে স্বাক্ষরকারী ডাক্তার ‘এইচ চৌধুরী’কে নিয়ে তীব্র বিতর্ক ও সন্দেহ দানা বাঁধলেও, তা নিয়ে পুলিশ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে তারও।

    তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে জেলা পুলিশের তরফ থেকে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের কাছে একটি বার্তা পাঠানো হয়েছে এ দিন। তাতে বলা হয়েছে, যে ভাবে অনুব্রত ও লিটনের অডিয়ো ক্লিপ (যার সত্যতা ‘এই সময়’ যাচাই করেনি) সংবাদমাধ্যমে শোনানো হচ্ছে, তা যাতে না করা হয়।

    এতে নাকি জনমানসে খারাপ বার্তা যাচ্ছে! নাগরিক মহলের একাংশের প্রশ্ন, এতে যদি খারাপ বার্তা যায়, তা হলে যাঁর বিরুদ্ধে এত কদর্য ভাষা প্রয়োগের অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধে কী কঠোর পদক্ষেপ করা হচ্ছে?

    এই বিতর্কের মধ্যে তৃণমূলেরই একাধিক নেতা কেষ্টর কুমন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর নিজেই বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। তবে এই ঘটনায় হুমায়ুনের প্রতিক্রিয়া, ‘বীরের সম্মান দিয়ে (অনুব্রতকে) বীরভূমে আনতে বলেছিলেন দিদি।

    নিশ্চয়ই কড়া ভাবে তাঁকে সতর্ক করবেন নেত্রী।’ তাঁর সংযোজন, ‘ভোটের সময়ে আমি যা বলেছিলাম (যে বিতর্কিত মন্তব্য), তার সঙ্গে এর তুলনা করা যায় না। কোনও অফিসারকে কখনও এ ভাবে আক্রমণ করিনি, করবও না।’ এ দিকে মালদার সুজাপুরের তৃণমূল বিধায়ক আব্দুল গণি বলছেন, ‘এটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা, এটা হওয়া উচিত নয়।’

  • Link to this news (এই সময়)