• কংক্রিটের মধ্যে ‘জঙ্গলমহল’ ৩৬৫ দিনই ওঁর কাছে ৫ জুন
    এই সময় | ০৫ জুন ২০২৫
  • সব্যসাচী ঘোষ, মালবাজার

    চারদিকে কংক্রিটের জঙ্গল। জলপাইগুড়ির মালবাজার শহরে দোতলা, তিনতলা বাড়ির মধ্যে চার বিঘা জমিতে এক চিলতে ‘গ্রিন স্পট’। বাড়ির নাম— ‘জঙ্গলমহল’। মালিকের নাম ত্রিপুরারি বিষ্ণু। স্ত্রী, দুই সন্তান নিয়ে পরিবার।

    গেট খুলে ঢুকতেই চোখে পড়বে এক চিলতে উঠোন। বাঁদিকে টিনের তিন শয্যার ঘর। বাকি জায়গা জুড়ে শুধু গাছ, গাছ আর গাছ। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, আতা, বহেড়া, হরিতকি, সবেদা— আরও কত কী। ৩০০–র বেশি গাছে পাখিদের বাসা।

    ওদের তেষ্টা মেটাতে গাছের ডালে বাঁধা জলের পাত্র। গাছের তলায় ঘুরে বেড়ায় খরগোশ, গিনিপিগ, মুরগি, পোষ্য কুকুর। এ ভাবেই ত্রিপুরারি ও তাঁর স্ত্রী রাধারানি শহরের ভিতরে নিজস্ব বাস্তুতন্ত্র গড়ে তুলেছেন।

    ২০০৬ সালে এসএসবি-র মেকানিক্যাল বিভাগ থেকে অবসর নিয়ে ন’ফুটের সরু গলির ভিতরে পৈতৃক জমিতে আবাস তৈরি করেন ত্রিপুরারি। তিন ভাইয়ের মধ্যে ছোট তিনি। বাবা ছিলেন জোতদার। জমিজমার অভাব ছিল না।

    কিন্তু ব্যবসায়ী দুই দাদার তুলনায় তিনি নিজেকে স্বতন্ত্র রেখেছেন। সে কারণেই সম্পত্তি বাড়ানো নয়, বরং ‘ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়’ বেছে নিয়েছেন নিজেই। ৫০ ছুঁইছুঁই ত্রিপুরারি বলেন, ‘সব তো এখন দু’–তিন কাঠা জমিতে বাড়ি। উঠোনে সিমেন্টের ঢালাই।

    শখ করে বারান্দায় দু’–চারটে টবে রাখা ফুলের গাছ। আমার ও রকম নাগরিক হওয়া হলো না। তাই শহরের মধ্যে আমি নিজের জগৎ তৈরি করেছি।’

    ত্রিপুরারির বাড়ির কাছেই থাকেন পরিবেশকর্মী স্বরূপ মিত্র। তিনি বলেন, ‘ছেলেবেলায় প্রথম পাখি চেনার পাঠ পেয়েছি এখান থেকেই। ত্রিপুরারি কখনও গাছ থেকে ফল পাড়েন না।

    ফিঙে, দোয়েল, ব্ল্যাক আইরিশ, শ্যামা, কালো ময়নার পেট ভরাতে সব ফল গাছেই রেখে দেন। রাত বাড়লে বড় বড় গন্ধগোকুলের আনাগোনা হয়। এমন জীবনযাপনের কথা প্রচারে তাঁর কোনও আগ্রহ নেই।’

    গাড়ির ব্যবসা করেন ত্রিপুরারি। নিজেই চালান সেই গাড়ি। সকালে বেরিয়ে সন্ধ্যায় ফেরেন। তার পরে একা–একা টহল দেন বাগানে। গভীর রাত পর্যন্ত। পরম মমতায় তাদের গায়ে সন্তান স্নেহে হাত বোলান। তাঁর জমির দাম কোটি ছাড়িয়েছে অনেকদিন আগেই।

    দাদাদের সঙ্গে ভাগবাঁটোয়ারার হিসেব কষার বাইরে গিয়ে গাছেদের নিয়ে সংসার ত্রিপুরারির কাছে অমূল্য মনে হয়। মালবাজার পুরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার বৃন্দাবন সাহা খুব ভালো করে চেনেন ত্রিপুরারিকে।

    তিনি বলেন, ‘আমার ওয়ার্ড নয়, পুরো মালবাজার শহরের ফুসফুস ওই বাড়িটা।’ ত্রিপুরারি মনে করেন, পরিবেশ দিবস কেবল বছরের একটি দিন হতে পারে না। ৩৬৫ দিনই ওঁর কাছে যেন ৫ জুন।

  • Link to this news (এই সময়)