মেরুকরণের তাসে ভরসা রেখেই পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে যেতে চাইছে বিজেপি শিবির। সেই মেরুকরণ পোক্ত করতে আসরে নামতে চলেছে সাধুসন্তদের বড় অংশ। সূত্রের খবর, পুজোর পর থেকে ‘সনাতনী আবহ’ তৈরি করতে একাধিক কর্মসূচির পরিকল্পনা হচ্ছে।
সম্প্রতি বঙ্গ সফরে এসে স্বামী বিবেকানন্দের বাড়িতে সন্ত সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ঘোষণা অনুযায়ী সেই সভা ছিল ‘অরাজনৈতিক’। কিন্তু বক্তাদের অধিকাংশই রাজ্যের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আসন্ন বিপদের ‘আশঙ্কা’ করেছেন। জনবিন্যাস পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে রাজ্যের সাংস্কৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কথা বলেছেন অনেকে। এমনকি, সনাতনী ভাবধারা প্রচারের পরিবেশ সঙ্কুচিত হচ্ছে বলেও অনেকের মত। শাহ সেখানে বলেছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলার মতো সীমান্তবর্তী রাজ্যে জাতীয়তাবাদী, দেশপ্রেমিক, সনাতনী সংস্কৃতির প্রচারক সরকার তৈরি হওয়া প্রয়োজন। এর জন্য সনাতনী সংগঠনগুলিকে ভূমিকা পালনের আহ্বান করেছেন শাহ।
সূত্রের খবর, এর পরেই পরিকল্পনা সাজাতে শুরু করেছে সংগঠনগুলি। পুজোর পরেই জেলায় জেলায় ‘সন্তযাত্রা’ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে আগামী ২৩ ও ২৪ জুন বাগবাজার এবং গোলপার্কে দু’টি প্রস্তুতি বৈঠক হওয়ার কথা। শেষ ধাপে আগামী ৭ ডিসেম্বর কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে গীতা পাঠের আয়োজন করতে চলেছে ‘সনাতন সংস্কৃতি সাংসদ’।
কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ‘লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠে’র অনুষ্ঠান হয়েছিল। পরের বছর তা হয়েছে শিলিগুড়িতে। সব কিছু ঠিক থাকলে এ বার সেই আসর হবে ব্রিগেডে। আয়োজক সূত্রে খবর, আকারে-বহরে সেটি গত দু’টি কর্মসূচির চেয়ে কয়েক গুণ বড় হতে চলেছে। অতিথি তালিকায় থাকার কথা বৃন্দাবনের শ্রীকৃষ্ণ কৃপা আশ্রমের অধ্যক্ষ গীতা মনীষী স্বামী শ্রী জ্ঞানানন্দ মহারাজ, ধামের আধ্যাত্মিক প্রধান ধীরেন্দ্র কৃষ্ণ শাস্ত্রী ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মহিলা শাখা দুর্গা বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাধ্বী ঋতাম্বরার মতো সনাতনী ব্যক্তিত্বের। ভোটের আগে সনাতনী আবহ তৈরি করে মেরুকরণকে পোক্ত করতেই যে এই কৌশল, তা আড়াল করছেন না আয়োজকদের একাংশ। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের এক নেতা বলেন, “বিপদ আমার বাড়ির দুয়ারে এসে পৌঁছনোর আগে তো আমার সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক পরিবর্তন প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যেই প্রত্যেক সংগঠন পরিকল্পনা তৈরি করছে।”
লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “বিজেপি শুধু বিভাজন তৈরি করতে জানে। কট্টর হিন্দুত্ব ছাড়া ওদের কোনও রাজনৈতিক দর্শন নেই। মোদী-শাহের কথাতেই তার স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে।’’ সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য সৃজন ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘হিন্দুদের জন্য কি রান্নারগ্যাস বা পেট্রল-ডিজ়েলের দাম কমবে? হিন্দুরা কি বেকারত্বের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন? হিন্দুদের জন্য কি বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুলগুলো খুলবে?’’তাঁর সংযোজন, ‘‘এইগুলো একটাও হবে না। কারণ, বিজেপি হিন্দুদেরও ভাল চায় না। ওরা আম্বানি-আদানির দল। সেটা প্রকাশ্যে বলতে লজ্জা পায় বলে, হিন্দুত্বের জামা গায়ে চাপিয়ে রাখে!’’